খেলা

টানা দ্বিতীয়বার ইউরোর সেমিফাইনালে ইংল্যান্ড

  স্পোর্টস ডেস্ক ৭ জুলাই ২০২৪ , ১২:৫৩:৩৯ প্রিন্ট সংস্করণ

টানা দ্বিতীয়বার ইউরোর সেমিফাইনালে ইংল্যান্ড
ছবি সংগৃহিত

ইংল্যান্ডের ম্যাচ মানেই স্টেডিয়ামে বা টেলিভিশনের সামনে থাকা দর্শকদের ঘুমিয়ে যাওয়ার মজার কিছু ছবি ইন্টারনেটে বেশ ভাইরাল। সেটা উড়িয়ে দিতে ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ফেভারিট একটি দলের মত পারফর্ম করা। তবে যথারীতি আরও একবার নিজেদের হারিয়ে খুজল গ্যারেথে সাউথগেটের দল। গোলের লক্ষ্যে প্রথম শট নিতেই লেগে গেল ৮০ মিনিট, যা বলে দেয় সুইজারল্যান্ড কতোটা পরীক্ষা নিয়েছে তাদের। যদিও লিড নিয়ে পরপরই গোল হজমে দলটি শেষের দিকে কিছুটা খেই হারায়। সেই সুযোগ কাজে না লাগাতে পারলেও টাইব্রেকারে শেষ হাসি হাসল কেইন-সাকারাই। তাতে টানা দ্বিতীয়বার ইউরোর সেমিফাইনালে জায়গা করে নিল ইংল্যান্ড।

ইউরো ২০২৪-এর তৃতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে টাইব্রেকারে ৫-৩ ব্যবধানে জিতেছে ইংল্যান্ড। নির্ধারিত সময়ে ম্যাচ শেষ হয়েছিল ১-১ সমতায়।

টাইব্রেকারে কোল পালমার লক্ষ্যভেদ করার পর সুইজারল্যান্ডের প্রথম শটেই ইংল্যান্ডকে এগিয়ে রাখেন পিকফোর্ড। রুখে দেন আকাঞ্জির শট। বেলিংহামও এরপর জাল খুঁজে নেন। সুইজারল্যান্ড এরপর বল জালে পাঠাতে সমর্থ হয়। সাকার পর শাকিরিও ঠিকানায় বল পাঠাতে ভুল করেননি। তাদের অনুসরণ করেন টনি ও জেকি আমদউন। ইংল্যান্ডের পঞ্চম শটে ট্রেন্ট আলেকজান্ডার-আরনল্ড বল জালে পাঠাতেই নিশ্চিত হয়ে যায় ইংল্যান্ডের।

ইংল্যান্ডের চলতি আসরে আগের চারটি ম্যাচের মত এই ম্যাচের শুরুটাও হয় ধীরস্থিরবেই। ইংল্যান্ডের নিজেদের গুছিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়ায় প্রথম দশ মিনিটে কয়েকবারই আক্রমণে যায় সুইজারল্যান্ড। যা শুরুতেই চাপে ফেলে সাউথগেটের দলের রক্ষণকে। তবে দ্রুতই নিজেদের গুছিয়ে নেয় সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। 

১৪তম মিনিটে বুকায়ো সাকার ক্রস বাউন্স করে যায় ডেকলান রাইসের কাছে। তবে আর্সেনাল মিডফিল্ডার শট নেওয়ার আগেই ব্লক করেন ফ্যাবিয়ান শার। প্রথম আধা ঘণ্টায় ইংল্যান্ডের আক্রমণের খেলোয়াড়রা সেভাবে প্রতিপক্ষের পরীক্ষা নিতে পারেননি। ২৫তম মিনিটে সুইজারল্যান্ড ছয়-গজ বক্সের মধ্যে নিজেদের মধ্যে বল দেওয়া-নেওয়ার সময় আগুয়ান ফিল ফোডেন বল প্রায় কেড়েই নিচ্ছিলেন ম্যানুয়েল আকানজির কাছ থেকে। তবে তার সেই প্রচেষ্টা আর সফল হয়নি।

বিরতির আগে দুই দলের কোনো দলই ক্লিয়ার কাট সুযোগ তৈরি করতে পারছিল না সেভাবে। ৪১তম মিনিটে হলুদ কার্ড দেখে অনাকাঙ্ক্ষিত এক রেকর্ড গড়েন সুইজারল্যান্ডের ডিফেন্ডার শার। এটি ছিল মেজর টুর্নামেন্টে তার অষ্টম কার্ড দেখার ঘটনা। ইতিহাসে তার চেয়ে বেশি কার্ড আর কেউই দেখেননি। 

৪৫তম মিনিটে শুরু থেকে দুর্দান্ত খেলা বুকায়ো সাকা ডান দিক থেকে বল নিয়ে বক্সের ভেতর বল বাড়ান। গোলের জন্য কোবি মাইনু শট নেওয়ার আগে দৌড়ে এসে পেছন থেকে স্লাইড ট্যাকলে দলকে বিপদমুক্ত করেন অভিজ্ঞ মিডফিল্ডার গ্রানিত শাকা। এই অর্ধে ৫৫ শতাংশ বল পজেশনে রেখে ইংল্যান্ড গোলের জন্য শট নেয় পাঁচটি। আর সুইজারল্যান্ড নেয় দুটি। কোনো দলই লক্ষ্যে রাখতে পারেনি একটি শটও। 

৫২তম মিনিটে গোলের জন্য লক্ষ্যে ম্যাচের প্রথম শটের দেখা মেলে, যা আসে সুইজারল্যান্ডের মাধ্যমে। ব্রিল এম্বোলোর শট অবশ্য সোজাসুজি যায় জর্ডান পিকফোর্ডের হাতে। পরবর্তী কয়েক মিনিটের মধ্যে কয়েকবার ইংলিশ রক্ষণে রীতিমতো কাপন ধরান এম্বোলো। এর মধ্যে একবার ছয় গজের মধ্যে দারুণ এক হেডারে ক্লিয়ার করেন এজর কোনসা। 

ইংল্যান্ডের জন্য হতাশার কারণ অবশ্য হন হ্যারি কেইন। দেশটির ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলস্কোরার সচরাচর নকআউট পর্বে ভালো খেললেও এই ম্যাচে একেবারেই ছন্দে দেখা যায়নি তাকে। ফলে আক্রমণে ইংল্যান্ড ছিল বেশ ধারহীন। আর সেটাই কাজে লাগাচ্ছিলো সুইজারল্যান্ড। 

শেষ পর্যন্ত ফল মিলেও যায় তাদের। ৭৫তম মিনিটে ড্যান এনডোয়ে ক্রস বাড়ান বক্সের ভেতর। ছয় গজের ভেতর থেকে ক্লিয়ার করার চেষ্টা করেছিলেন জন স্টোনস। তবে পা ছোঁয়াতে পারেননি তিনি। ফাঁকা পোস্টে বল জালে পাঠাতে আর ভুল হয়নি এম্বোলোর। 

গোল খেয়েই যেন ঘুম ভাঙে ইংল্যান্ডের। ৮০তম মিনিটে ডান উইংয়ে রাইসের কাছ থেকে বল পেয়ে সাকা পেনাল্টি সীমানার কাছাকাছি জায়গা থেকে কোনাকুনি শটে ঠিকানা খুঁজে নেন। গোলের লক্ষ্যে এটিই ছিল ইংল্যান্ডের প্রথম শট। ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। 

৯৫তম মিনিটে দূর থেকে প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন রাইস। তবে বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে দারুণ সেভ করেন ইয়ান সমার। অতিরিক্ত সময়ে এসে যেন আক্রমণেও দম পায় ইংল্যান্ড। টানা আক্রমণে তাতে বাড়ছিল গোলের আশাও। তবে কাজের কাজ হয়নি। বক্সের ভেতর ভালো জায়গা থেকে শট নিয়েছিলেন জুড বেলিংহাম, তবে সোজা পাঠান সমারের হাতে। 

১১১তম মিনিটে কেইনকে তুলে নেন সাউথগেট। তার জায়গায় নামেন পেনাল্টি স্পেশালিষ্ট ইভান টনি। ১১৭তম মিনিটে ইংলিশ শিবিরে কাঁপন ধরান জর্দান শাকিরি। তার করা কার্লিং কর্নার সরাসরি গিয়ে ফিরে আসে পোস্টে লেগে। একটি এদিক-ওদিক হলেই মিলতে পারত গোল। এরপর টাইব্রেকারে বিদায় ঘণ্টা বেজে যায় ম্যাচে দারুণ খেলা সুইজারল্যান্ডের।

আরও খবর

                   

সম্পর্কিত