প্রতিনিধি ২৩ এপ্রিল ২০২৪ , ২:৩৩:২৭ প্রিন্ট সংস্করণ
অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব-বিএনপি
সুপ্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
আসসালামু আলাইকুম। আপনাদের সবাইকে জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা। শেখ হাসিনার ইচ্ছায় এদেশে আইনের প্রয়োগ হয়। প্রচলিত ফৌজদারী, দেওয়ানীসহ সকল আইন শেখ হাসিনার সংস্করণ অনুযায়ী প্রয়োগ করতে হয়। ৭ জানুয়ারী ডামি নির্বাচনের পর বাংলাদেশের একচ্ছত্র অধিপতি হয়ে উঠেন শেখ হাসিনা। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও দেশনায়ক তারেক রহমানসহ দেশের বিরোধী দলের প্রধান নেতারাসহ লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীর ওপর নেমে আসা জেল- জুলুম, অত্যাচার আর অবিচারের প্রকটতা দেখে বিশ্ব সম্প্রদায় বিচলিত হলেও তাতে প্রধানমন্ত্রীর কোন যায় আসে না। তাঁর সকল অপকর্মের দায় নিয়েছে পার্শ্ববর্তী দেশ। বন্ধুরা,
দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দুরে রাখার জন্যই যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে বন্দী করা হয়েছে তা আজ দেশ-বিদেশে সর্বজনবিদিত। গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার রিপোর্টেও সেটি উল্লেখ করা হয়েছে। রিপোর্টে বাংলাদেশের গুম, খুন, গুপ্তহত্যা, কারানির্যাতনসহ ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সেখানে আরও বলা হয়েছে-অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনে নাগরিকদের অধিকার হরণ করা হয়েছে। বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশে বাধা প্রদানসহ বিভিন্ন অবনতিশীল মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার রিপোর্টের ব্রিফিংয়ে মিঃ গিলক্রিষ্ট মানবাধিকার পরিস্থিতিতে উদ্বেগজনক বলেছেন। ব্রিফিংয়ের একপর্যায়ে তিনি বলেছেন, A Political ploy to remove the leader of the opposition from the electoral proces, even as multiple corruption charges against Prime Minister were dropped by prosecutors.
দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাজা নিয়ে দেশবাসী এতদিন যা মনে করেছে তা মার্কিন প্রতিবেদনেও সেটি উঠে এসেছে। ডামি প্রধানমন্ত্রীর দ্বারা আবারও প্রমাণিত হলো ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা পেলে বিরোধী শক্তিসহ গণতন্ত্র স্বীকৃত নাগরিক স্বাধীনতাকে নিশ্চিহ্ন করা যায়। আর আইন-আদালত প্রবল প্রতাপশালী একনায়কের ‘নির্দেশপত্র’ মোতাবেক চলে, যেমনভাবে শেখ হাসিনা ক্ষমতাসীন হওয়ার পর নিজের মামলাগুলিকে নিরুদ্দেশ করেছেন। বিরোধী দলকে দমনের বিপুল প্রচেষ্টা সার্থক করতে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও ধারাবাহিক খুনের এক ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের বাতাবরণ তৈরী করা হয়। সুষ্ঠু ভোট, নির্বাচন, ভোটাধিকার কবরে শায়িত থাকে। প্রকৃত বিরোধী দল না থাকায় ডামি জাতীয় সংসদকে পরিণত করা হয় House of entertainment এ।
সাংবাদিক বন্ধুরা,
বর্তমান ডামি সরকারের ‘অভিন্নহৃদয় বড় বন্ধু’ হচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত। মনে হচ্ছে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের চাবিটা শেখ হাসিনা তাদের দিয়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশ সরকারের সকল অপকর্মের একমাত্র Protector হিসেবে তারা একমাত্র ভারতকেই মনে করে। তাই প্রায় প্রতিদিনই বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত বিএসএফ কর্তৃক বধ্যভূমি বানানো হলেও আওয়ামী নিপীড়ক সরকারকে নিশ্চুপ থাকতে হয়। হিউম্যানস্ক্রীট শুণ্য বিএসএফ এর রক্তপিপাসু ভূমিকায় সারাজাতি ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উৎকণ্ঠিত। বিএসএফ এর নরহত্যার দায় দখলদার আওয়ামী সরকারের উপরেও বর্তায়। তাদের নতজানু নীতির কারণে বিএসএফ আশকারা পাচ্ছে। গতকালও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাধীন কসবা উপজেলার পুটিয়া সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে হাসান মিয়া নামে এক বাংলাদেশী যুবক নিহত হয়েছে। সীমান্তে রক্তের দাগ যেন শুকাচ্ছেই না। বাংলাদেশী মানুষের রক্তে সীমান্ত সবসময়ই ভেজা থাকছে। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ যেন নির্যাতন আর মৃত্যুর নির্মম খড়গ। তাদের মনে নিত্য জেগে রয়েছে কেবল হত্যার উল্লাস।
আর দখলদার আওয়ামী সরকার আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও যুবলীগ-ছাত্রলীগ ক্যাডারদের দিয়ে নিজস্ব সেনাদল গঠন করে নিজ দেশের জনগণের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত চালাচ্ছে সাঁড়াশী অভিযান। কিন্তু ক্ষমতার নেশায় আচ্ছন্ন দখলদার আওয়ামী সরকার বিএসএফ এর বর্গীর ভূমিকার বিরুদ্ধে টু শব্দ করতে পারেনি।
আমি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক গতকাল নিহত হাসান মিয়াসহ প্রতিনিয়ত বাংলাদেশী মানুষদের নির্বিচারে হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাচ্ছি। গতকাল কসবা উপজেলার পুটিয়া সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে নিহত হাসান মিয়া’র আত্মার শান্তি কামনা করছি এবং তার পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সহানুভূতি জানাচ্ছি।
বন্ধুরা,
সারাদেশে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশ বাহিনী কর্তৃক হামলা, মামলা ও গ্রেফতারের বিবরণ:
গ্রেফতার:
> ঢাকা মহানগর দক্ষিণের অন্তর্গত ওয়ারী থানাধীন ৩৯ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক- জাফর ইকবাল লিটনকে গতকাল গ্রেফতার করে পুলিশ। এছাড়াও লালমনিরহাট জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক- সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম মমিনুল হক ও সদর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর খান একটি মিথ্যা মামলায় উচ্চ আদালতের জামিন থাকা সত্ত্বেও গতকাল জেলা আদালতে জামিন চাইতে গেলে আজ্ঞাবহ আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করে
কারাগারে প্রেরণের ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
> গত ১৯ এপ্রিল ২০২৪ তারিখ চট্টগ্রাম মহানগর তাঁতীদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও আকবর শাহ থানা তাঁতীদলের সভাপতি মোঃ আনোয়ার হোসেন জাহাঙ্গীরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আমি অবিলম্বে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত সকল নেতৃবৃন্দের নিঃশর্ত মুক্তির জোর আহ্বান করছি।
ধন্যবাদ সবাইকে। আল্লাহ হাফেজ।