স্টাফ রিপোর্টার ৩ নভেম্বর ২০২৪ , ১:৪৯:৫০ প্রিন্ট সংস্করণ
সারা দেশে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের ‘অবাধ্য’ নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের স্তুপ পড়েছে দলটির শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর হামলা, দখল, অর্থ দাবি, আধিপত্য বিস্তার এবং দলীয় নির্দেশনা অমান্য করাসহ সুনির্দিষ্ট অভিযোগে গত দুই মাসে এক হাজারের বেশি নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে বিএনপি। এর মধ্যে বহিষ্কার, অব্যাহতি, পদাবনতি ও কমিটি বাতিল করার মতো কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের পরও থামেনি ফুলবাড়ীয়ার পৌর বিএনপির আহবায়ক একেএম শমসেরর আলী।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিভিন্ন স্থানে পৌর বিএনপির আহবায়ক একেএম শমসের আলী নেতৃত্বে উপচেলা কৃষক দলের সদস্য সচিব আতাহার আলী, উপজেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহবায়ক ফজলুল হক, উপজেলা সেচ্ছাসেবক দলের শফিকুল ইসলাম, পৌর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মনিরুজ্জামান সোহাগ, পৌর কৃষক দলের যুগ্ম আহবায়ক আল আমিন, ৪নং ওয়ার্ড বিএনপি তারা মিয়া, পৌর বিএনপি’র সদস্য গোলাম মোস্তফাসহ নেতা-কর্মীদের একটি অংশ নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়ায়। এমনও অভিযোগ উঠেছে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের সাথে আতাত করে ক্ষমতার দ্বারপ্রান্তে এসে গেছে ধরে নিয়ে তাঁরা কোথাও হামলা, চাঁদাবাজি, দখল, আবার কোথাও আধিপত্য বিস্তারে সংঘর্ষ ও হাঙ্গামায় লিপ্ত হন। ফুলবাড়ীয়ায় স্থানীয় নেতারা বলছেন, এত কম সময়ে এত বিপুলসংখ্যক নেতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিলেও ব্যবস্থা নেয়নি পৌর বিএনপির আহবায়ক একেএম শমসেরর আলী বিরুদ্ধে।
তবে বিএনপি নেতাদের অনেকে বলছেন, এই ‘অবাধ্য’ নেতা-কর্মীদের গত দুই মাসের কর্মকান্ডে ১৫ বছর ধরে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার দলকে সমালোচনার জায়গায় নিয়ে গেছে। বিশেষ করে, একটি বড় রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর ফুলবাড়ীয়া বিএনপি আগামী দিনের রাজনীতিতে বা ক্ষমতায় গেলে নেতা-কর্মীরা কী ধরনের আচরণ করতে পারেন, বিতর্কিত কর্মকান্ড গুলো সেসব প্রশ্নের মুখোমুখি করেছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে।
সম্প্রতি আখতারুল আলম ফারুক, করিম সরকার, মামুনুর রশীদের নাম ভাঙ্গিয়ে শমসের আলীর চাপে খাদ্য বান্ধব ডিলারদের প্রত্যকের কাছ থেকেই ৩হাজার টাকা করে চাঁদাবাজী করতে বাধ্য হয়েছেন খাদ্য গুদামের কর্মকর্তা বলে জানা গেছে। এ টাকা উত্তোলনের দায়িত্ব পালন করেন উপজেলা মৎসজীবীলিগ নেতা রাহাত মির্জা ও বাক্তা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জহিরুল আকন্দ। তারা খাদ্য বান্ধব ডিলার বলেও জানা গেছে। বিষয়টি নিয়ে কয়েকজন খাদ্য বান্ধব ডিলারের ফোন আলাপে এমন তথ্য বেরিয়ে আসে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওয়ালটন প্লাজা থেকে একটি ফিজ কিনে ১০ হাজার টাকা দিয়ে বাকি টাকা দেননি। বাকি টাকা চাইতে ওয়ালটন প্লাজার ম্যানেজারের প্রতি চরাও হয়। খাদ্য গুদামে চাঁদা, ভূমি অফিসে চাঁদা, সাব রেজিষ্ট্রে অফিসে চাঁদা, উপজেলা প্রত্যেকটি অফিসে চাঁদাবাজী করছেন শমসের বাহিনী।
এতেই শেষ নয়, ৫ আগস্টের পর থেকে আওয়ামী লীগ নেতাসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ ও ধর্নাঢ্য ব্যক্তিদের টার্গেট করে মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে আসছিলেন শমসের আলীর। মামলা থেকে বাঁচতে হলে তাকে টাকা দিতে হবে এমনটা দাবি করছিলেন অনেকের কাছে। আবার অনেকের কাছ থেকে তিনি টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
৫ আগস্টের পর ফুলবাড়ীয়া সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের কবিরকে নিয়ে তোলকামাল হয়। পরে শেষে কবিরকে অফিস থেকে বাহির করে দেওয়া হলে কিছুদিন যেতে না যেতেই শমসের মোটা অংকের টাকা নিয়ে মিমাংশা করে পূনরায় বহাল করতে সহযোগিতা করেন।
ফুলবাড়ীয়া উপজেলার কুশমাইল ইউনিয়নে ছলির বাজারে বিগত আওয়ামীলীগ আমলে সেলিমের নেত্বেত্বে বিএনপি নেতাদের কিছু দোকান পাঠ দখলে নেন। ৫ আগস্টের পর তারা ফিরিয়ে নিলেও শমসের ও তার ভাগীনারা কিছুদিন পর পর হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। পরে থানায় অভিযোগ করলে শমসের বাহিনী কাগজপত্র দেখাতে পারেনি বলেও ভিডিও বার্তায় জানান স্থানীয়রা।
শমসেরের উৎপাতে অতিষ্ঠ ফুলবাড়ীয়া সাবেক ও বর্তমান অফিসার ইনচার্জ। তারা বলেন বিএনপি নেতাদের জন্য আমরা আমাদের কাজ করতে পাচ্ছিনা। কোন কিছু হলেই শমসের দরবার নিয়ে হাজির থানায়। কয়েক বার বারণ করেছি। তার পরও কমছেই না তার আসা যাওয়া। অডিও বার্তায় জানান অফিসার ইনচার্জগণ।
আলোচনায় শোনা যায়, শমসের বিএনপি’র কিছু নেতাদের নাম ভাঙ্গিয়ে সরকারের উর্ধতন কর্মকর্তাকে মামলার ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা আত্মসাৎ করেন।
এ ব্যাপারে পৌর বিএনপির আহবায়ক একেএম শমসের আলী সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমাকে হেয় করার জন্য একটি মহল আমার বিরুদ্ধে এমন কথা বলে বেরাচ্ছে। আসলে এমন কোন বিষয় হয়নি। একটি ফোন আলাপ রেকর্ডে এমনটাই শোনা যায়।
আমিও এমন অভিযোগ শুনেছি কিন্তু প্রমান পাচ্ছি না তাই কোন ব্যবস্থা গ্রহন করতে পাচ্ছি না। যদি আমাদের হাতে সঠিক তথ্য আসে তাহলে তাকে দল থেকে বহিস্কার করব। ফোনালাপ কালে জানান উপজেলা বিএনপি’র আহবায়ক আক্তারুল আলম ফারুক।
এ থেকে পরিত্রাণ চান ফুলবাড়ীয়ার বিএনপি’র ত্যাগী নেতারা। তা না হলে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে।