যশোর প্রতিনিধি: তুহিন আলম ৩ জুলাই ২০২৪ , ১:৩৬:১৬ প্রিন্ট সংস্করণ
বাংলাদেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর যশোরের বেনাপোল কাস্টমের টানা এক যুগের ব্যর্থতা পেছনে ফেলে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২১৬.৫৯ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আয় করেছে বেনাপোল কাস্টমস হাউস। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে হাউসটি রাজস্ব অর্জণে এই সফলতার মুখ দেখলো।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এই অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে বেনাপোল কাস্টম হাউসকে ৬২৩৮ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। বেনাপোল কাস্টম হাউস এ বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত সংশোধিত রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রকাশ করেছেন ৫৯৪৮ কোটি টাকা। আদায় করেছে ৬১৬৪ দশমিক ৫৯ কোটি টাকা। যার প্রবৃদ্ধির হার দেখানো হয়েছে ৬ দশমিক ৫৩ শতাংশের বেশি। এই সময়ে বন্দরটি দিয়ে ভারত থেকে পণ্য আমদানি হয়েছে ১৭ লাখ ২১ হাজার ৭৮০ টন। যা বিগত বছরের তুলনায় ২ লাখ ৮১ হাজার ৯৭০ টন কম। পণ্য আমদানি কমলেও রাজস্ব আদায় বেড়েছে।
সূত্রমতে, বিদায়ী অর্থবছরে ফেব্রিক্স, পচনশীল কাঁচা পণ্য, ইংগড, ট্রাকের চেচিস, মটরপার্টস এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল কাঁচামাল থেকে এই বন্দরটি থেকে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। সর্বোচ্চ রাজস্ব প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ছিল-পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বিডি, এসএমসিএল নিলয় ও এসএম কর্পোরেশন।
কাস্টম সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে বেনাপোল কাস্টমস হাউসে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকা। সেখানে আদায় হয়েছিলো ৫ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কম হয় ১৮০ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৬২৪৫ কোটি টাকা। আদায় হয়েছিলো ৪৫৯৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এতে রাজস্ব ঘাটতি হয় ১৬৪৫ কোটি ৮ লাখ টাকা। তবে সংশোধিত রাজস্ব আয় ৫১৫৮ কোটি টাকার বিপরীতে ঘাটতির পরিমাণ ৫৫৮ কোটি ৮ লাখ।
তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ২৪৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। সেখানে আদায় হয়েছিল ৪ হাজার ১৪৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা। ওই বছর ঘাটতি ছিল ২ হাজার ৯৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছিল ৩ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ঘাটতি ১১৪৫ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ঘাটতি ১৭৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। তবে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৪৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা রাজস্ব বেশি আদায় হয়েছিল। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ঘাটতি ২০৩ কোটি টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ঘাটতি ৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ঘাটতি ১৩৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ঘাটতি ৪৫২ কোটি ৮৯ লাখ এবং ২০১১-১২ অর্থবছরে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১৯৪ কোটি টাকা।
তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজস্ব আহরণে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বেনাপোল বন্দর কাস্টম সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, বেনাপোল কাস্টম হাউসের ঘুষখোর কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে তাদের নামে ও বেনামে বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবসহ নগদ অর্থ ও সম্পত্তির খোঁজ-খবর নিলে বেরিয়ে আসবে অনেক অজানা তথ্য। এতে বাড়তে থাকবে রাজস্ব আয়।
বেনাপোল কাস্টম হাউসের ডেপুটি কমিশনার মির্জা রাফেজা সুলতানা বলেন, কমিশনারের সঠিক দিক নির্দেশনায় বেনাপোল কাস্টম হাউস রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। এখানে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা বেড়েছে। আগামীতে এ রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জণ অব্যাহত থাকবে।