প্রচ্ছদ

নানা সংকট ও গ্রুপিংয়ে জর্জরিত জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল,চাঙা করতে নানা উদ্যোগ

  ষ্টাফ রিপোর্টার: মো.আসিফুজ্জামান আসিফ ৬ জুন ২০২৪ , ১১:৩১:১২ প্রিন্ট সংস্করণ

নানা সংকট ও গ্রুপিংয়ে জর্জরিত জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল,চাঙা করতে নানা উদ্যোগ

নানা সংকট ও গ্রুপিংয়ে জর্জরিত জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল। আবার দুই বছরের কমিটির বয়স এখন ১১ বছর। দীর্ঘদিন ধরে কাউন্সিল না হওয়ায় উঠে আসছে না নতুন নেতৃত্বও।

যদিও এই সময়ে একাধিকবার কাউন্সিল করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও অদৃশ্য কারণে তা থমকে যায়। এ ছাড়া রাজপথেও রাখতে পারেনি ‘উল্লেখ্যযোগ্য’ ভূমিকা। গ্রুপিং এতটাই প্রকট যে, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ইউনিট কর্মসূচি পালন করে আলাদাভাবে। এতে ক্ষুব্ধ বিএনপির হাইকমান্ড। এমন অবস্থায় সাংগঠনিক কার্যক্রমে গতি এনে তৃণমূলকে সুংসগঠিত করতে দেশব্যাপী বুনিয়াদি কর্মশালার আয়োজন করছে শ্রমিক দল। এরপরই কাউন্সিল করতে চায় সংগঠনটি।
নেতা-কর্মীরা বলছেন, শ্রমিক দলের ঘুরে দাঁড়াতে হলে জরুরিভাবে একাধিক সাংগঠনিক পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রথমত, দ্রুত কাউন্সিল করে সংগঠনের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করতে হবে। রাজপথের পরীক্ষিত ও হামলা-মামলার ঝুঁকি মাথায় নিতে পারবেন এমন যোগ্য নেতৃত্ব বাছাই করতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও শ্রমিক দলের উপদেষ্টা নজরুল ইসলাম খান খবরের কাগজকে বলেন, ‘শ্রমিক দলের কাউন্সিল করার কাজ চলছে। মামলা-মোকাদ্দমা এবং মাঝে দুই বছর কোভিডের কারণে কাউন্সিল করা সম্ভব হয়নি। শ্রমিক দল পুনর্গঠনে যত দ্রুত সম্ভব কাউন্সিল হবে।’
বিএনপির সহযোগী সংগঠন দুটি- ছাত্রদল ও শ্রমিক দল। গুরুত্বের দিক দিয়ে ছাত্রদলের পরই শ্রমিক দলের অবস্থান। সর্বশেষ ২০২০ সালে কাউন্সিলের দিনক্ষণ ঠিক করেও তা হয়নি। প্রতিষ্ঠার পর বিভিন্ন আন্দোলনে খ্যাতি পেলেও বর্তমানে অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়েছেন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এমন পরিস্থিতিতে শ্রমিক দলকে চাঙা করতে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসকে সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি এক বছর ধরে কেন্দ্র ও তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সমন্বয় করে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে নানামুখী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।
জানা গেছে, শিগগিরিই সারা দেশের শ্রমিক নেতাদের ঢাকা ডেকে বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কর্মশালার দিনক্ষণ চূড়ান্ত করার মতামত নেওয়া হবে। প্রত্যেক জেলায় আয়োজক কমিটি গঠন করা হবে। কোরবানির ঈদের পর শুরুতে বিভাগীয় শহরে পরে জেলা শহরে শ্রমিকদের দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। অংশগ্রহণকারীদের প্রশিক্ষণ সনদ প্রদান, সংগঠন শক্তিশালী করতে তৃণমূলের সুপারিশ, ভবিষ্যৎ করণীয় এবং কাউন্সিলের ব্যাপারে মতামত নেবেন শীর্ষ নেতারা।
সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বলছেন, শ্রমিকদের নায্য অধিকার আদায়ে সভা-সেমিনার ও কর্মশালার মাধ্যমে তাদের সচেতন ও জাগ্রত করা হবে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাসনামলে শ্রমিকদের কল্যাণে নেওয়া পদক্ষেপের নানাদিক তুলে ধরে শিগগিরই লিফলেট বিতরণ করা হবে। ইতোমধ্যে জেলা-মহানগরে লিফলেট পৌঁছে গেছে। এর আগে ২০২৩ সালে ১০ বিভাগ ও ৩৫ জেলায় শ্রমিক কনভেনশন করা হয়েছিল।

শ্রমিক দলের সমন্বয়ক শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস খবরের কাগজকে বলেন, ‘দেশ, মানুষ ও শ্রমিকদের উজ্জীবিত করতে গত এক বছর ধরে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। সারা দেশের কর্মশালা শেষে সঠিক নেতৃত্ব নির্বাচনে কাউন্সিলের ডাক দেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘শ্রমিক সংগঠনগুলোকে দুর্বল করতে শিল্পকারখানাগুলোতে ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রকে শক্তিশালী করার জন্য নাগরিকদের মৌলিক অধিকার, রাজনীতির অধিকার, অর্থনীতির শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্ত হওয়া দরকার। এসব বিষয়ে শ্রমিকদের সচেতন করতে দেশব্যাপী কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বিগত দিনেও শ্রমিকরা যেভাবে আন্দোলনে রাজপথে ছিলেন, আগামী দিনেও একইভাবে রাজপথে থাকবেন।’
দলীয় সূত্রমতে, ২০১৪ সালের ১৯ ও ২০ এপ্রিল শ্রমিক দলের জাতীয় কাউন্সিল হয়। কিন্তু ৮০ শতাংশের বেশি কাউন্সিলর ভোটের মাধ্যমে কমিটি গঠনের দাবি তুললে গোলযোগের সৃষ্টি হয়। পরে ওই বছরের ৫ মে আনোয়ার হোসাইনকে সভাপতি এবং নূরুল ইসলাম খান নাসিমকে সাধারণ সম্পাদক করে শ্রমিক দলের ৩৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হয়। ওই কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি শফিকুল ইসলাম, সহসভাপতি মো. বশির আহমেদ, সহ-সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফজলুল হক মোল্লা এবং শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক আবু তাহের মারা গেছেন।
আর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল্লাহ রাজ চৌধুরী আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ায় তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু এসব পদে এখন পর্যন্ত কাউকে স্থলাভিষিক্ত করা হয়নি। শারীরিক অসুস্থতার কারণে বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক রাজনীতিতে সময় দিতে পারেন না।
এ ছাড়া ৭৮টি সাংগঠনিক জেলা কমিটির মধ্যে বর্তমানে ২৭-২৮ জেলায় কমিটি রয়েছে। আর সেগুলোও মেয়াদোত্তীর্ণ। বাকি জেলার কমিটি প্রায় এক যুগের আগের কমিটি। এর মধ্যে অনেক কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক মারা গেছেন। সারা দেশে ১৭০টির বেশি ট্রেড ইউনিয়ন রয়েছে। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শ্রমিক দলের আহ্বায়ক কমিটির বয়স দুই বছরের বেশি। বিগত আন্দোলনে ঢাকা মহানগর শ্রমিক দলের নেতা-কর্মীদের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ বিএনপির হাইকমান্ড। ঢাকা শহরের ৫৪টি ট্রেড ইউনিয়নের বেশির ভাগ দক্ষিণ শ্রমিক দল তাদের কবজায় রেখেছে বলেও অভিযোগ নেতা-কর্মীদের।
তাদের অভিযোগ, গত বছরের ২৮ অক্টোবর সংঘর্ষের পর অনেকটাই ফটোসেশন করে কর্মসূচি পালন করেছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শ্রমিক দল। তবে উত্তরের পারফরম্যান্স ছিল কিছুটা উল্লেখ করার মতো। তবে উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে দূরত্ব স্পষ্ট। একসঙ্গে কর্মসূচি পালন করতে চায় না তারা। দক্ষিণে ট্রেড ইউনিয়ন থাকলেও সেই মাত্রায় তাদের নেই শক্তি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছাড়া কেউ কাউকে মানতে চান না। অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা দক্ষিণ শ্রমিক দলের নিয়মে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পার্টির ফান্ডও আত্মসাৎ করা হয়েছে বলেও জানান কেউ কেউ।
তবে এসব অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেন দক্ষিণ শ্রমিক দলের সদস্য বদিউল আলম সবুজ। তিনি বলেন, অনেকে হয়তো রাগ-অভিমান থেকে এসব কথা রটাচ্ছেন।
শ্রমিক দলের কমিটিতে ‘এক নেতা এক পদ’ নীতি মানা হয়নি। কমিটির প্রায় এক ডজন নেতা জেলার বড় পদে রয়েছেন। তারা হলেন সংগঠনের সহসভাপতি মতিউর রহমান অভয়নগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ নুরুল্লাহ বাহার চট্টগ্রাম শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক, সহ-সাধারণ সম্পাদক জি এম ফারুক বরিশাল শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক, সহ-সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিয়া কুমিল্লা উত্তর জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি, সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম মুন্সীগঞ্জ জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি, সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুস সামাদ সাতক্ষীরা জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি, সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ সোরমান আলী সিলেট জেলা শ্রমিক দল সভাপতি, সহ-প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ মফিদুল ইসলাম মোহন ময়মনসিংহ শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক।

শ্রমিক দলের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাবেক সভাপতি কাজী আমীর খসরু বলেন, ‘অযোগ্য নেতৃত্বের কারণে অনেকেই সংগঠন ছেড়ে দিয়েছেন। কর্মীদের উৎসাহ থাকলেও নতুন নেতৃত্ব না আসায় অনেকেই হতাশ। যত দ্রুত সম্ভব শ্রমিক দলের কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি হওয়া উচিত।’
সংগঠনটির নেতারা জানান, নতুন কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান সমন্বয়ক শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, কেন্দ্রীয় শ্রমবিষয়ক সহ-সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান, এ এম নাজিম উদ্দিন (চট্টগ্রাম), সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আবুল খায়ের খাজা, শ্রমিক দলের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাবেক সভাপতি কাজী মো. আমীর খসরু, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জুসহ আরও কয়েকজন নেতা।

আরও খবর

                   

সম্পর্কিত