প্রচ্ছদ

নদী ভাঙ্গনের কবলে সুনামগঞ্জের ব্রাক্ষ্রণগাঁও গ্রামের ৫শতাধিক পরিবার

  আবুহায়াত আহমেদ (সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি) ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ , ১১:২১:৪৮ প্রিন্ট সংস্করণ

সুনামগঞ্জের ব্রাক্ষ্রণগাঁও গ্রামের ৫ শতাধিক পরিবারের লোকজন নদী ভাঙ্গণের কবলে পড়ে ইতিমধ্যে সর্বস্ব হারিয়েছেন অধিকাংশ পরিবার। সরকার কিংবা স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যকরী কোন পদক্ষেপ না থাকায় দিশেহারা গ্রামবাসী।

শনিবার সরেজমিনে ঘুরে ও গ্রামবাদিসর সাথে কথা বলে জানা যায়, জেলার সদর উপজেলার কুরবাণ নগর ইউপির ব্রাক্ষ্রণগাঁও গ্রামে ৫ শতাধিক হিন্দু,মুসলিম ভূমিহীন,দিনমুজুর ও কৃষকরা মিলেমিশে বসবাস করে আসছেন।

কিন্তু বিগত ২০০৯ সাল থেকে ভয়াবহ শুরু হওয়া নদীভাঙ্গনে ইতিমধ্যে এই গ্রামের আড়াই শতাধিক পরিবার তাদের বসতভিটা,চারটি মন্দির ও দুটি মসজিদ নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। চলতি বছরের গত ১৬ই ডিসেম্বরের পর থেকে সুরমা নদীর পানি কমতে শুরু করায় ব্যাপকভাবে নদীভাঙ্গণ দেখা দেয়ায় এতে আরো প্রায় শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি হুমকির মধ্যে রয়েছে।

ফলে সুরমা নদী তীরবর্তী এই গ্রামের মানুষজন তাদের বসতভিটা নিয়ে শংঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন বলে অভিযোগ তাদের। তারা বার বার জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের ধারস্থ হলেও কেবলই আশার বানী শুনে আসলেও কার্যকরী কোন পদক্ষেন না নেওয়াতে হতাশা গ্রামের ৫ শতাধিক পরিবারের হাজাঁরো লোকজন। এই গ্রামের অধিকাংশ মানুষজন ভূমিহীন,অস্বচ্ছল দিনমুজুর । তারা এই মৌসুমটাকে অন্যর বোরোজমি বর্গা নিয়ে কৃষিজমি আবাদ করছেন। অবিলম্বে বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার ও স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যকরী পদক্ষেপ না নিলে তারা আগামী চৈত্রমাসের আগেই বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়লে পরিবার পরিজন নিয়ে কোথায় অবস্থান করবেন জানা নেই তাদের।

এ ব্যাপারে গ্রামের ভূক্তভোগী ভূমিহীন মোহাম্মদ আলী সাংবাদিকদের কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান,তার ইতিমধ্যে তিনটি বসতবাড়ি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। বর্তমানে যে চার নম্বর বাড়িটিতে বসবাস করছেন যেভাবে নদীর পানি কমার সাথে সাথে নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে তার এই শেস সম্বল এই বাড়িটি ও নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যেতে পারে বলে তিনি আশংঙ্কা প্রকাশ করছেন। অবিলম্বে এই দিনমুজুরের বাড়িটি রক্ষার পাশাপাশি তার এই ব্রাক্ষ্রণগাঁও গ্রামটিকে রক্ষা করতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সরকারের নিকট জোর দাবী জানান।

এ ব্যাপারের কুরবান নগর ইউপির ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ আব্দুল মান্নান জানান,আমি একজন তৃণমূলের জনপ্রতিনিধি হিসেবে এই গ্রামের মানুষজনকে রক্ষা করতে বার বার পানি উন্নয়ন বোর্ডের উধর্বতন কৃর্তপক্ষের ধারস্থ হয়ে ও আশার বাণী কেবলই শোনে আসলাম। কিন্তু বাস্তবে কথার সাথে কাজের কোন মিল না পাওয়াতে তিনি হতাশা ব্যক্ত করেন। তিনি বর্তমান অন্তবর্তী কালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার মাধ্যমে পানি মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টার নিকট জোর দাবী জানান,সরকার দ্রæত কার্যকরী পদক্ষেপ না নিলে আগামী চৈত্রমাসের আগেই পুরো গ্রামটি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যেতে পারে।

এ ব্যাপারে কুরবান নগর ইউপি ,চেয়ারম্যান, মোঃ আবুল বরকত জানান,২০০৯ সালেআমার ইউনিয়নের ব্রাক্ষ্রণগাঁও সহ আশপাশে কয়েকটি গ্রাম নদী তীরবর্তী হওয়াতে ব্যাপক নদীভাঙ্গন দেখা দিয়েছি। আমি বার বার জেলা প্রশাসনের উধর্বতন কর্তৃপক্ষের স্মরণাপন্ন হয়েছি নদী ভাঙ্গণের কবল থেকে এই গ্রামের মানুষজনকে রক্ষার জন্য। কিন্তু বিগত সরকারের আমলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে আশানুরুপ কোন বরাদ্দ না পাওয়াতে নদী ভাঙ্গণ রোধ করা সম্ভব হয়নি। অবিলম্বে এই অন্তবর্তী সরকার নদী ভাঙ্গনের কবল থেকে কয়েকটি গ্রামের মানুষজনকে রক্ষায় কার্যকরী পদক্ষেপ নিবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ -১ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মামুন হাওলাদার জানান,পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে গত ২০২৩ সালে জেলার বিভিন্ন এলাকাতে নদী ভাঙ্গণ রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পনি মন্ত্রনালয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রনালয়ে থেকে নির্দেশনা পেলেই এই জেলার যে সমস্ত জায়গা নদী ভাঙ্গণ দেখা দিয়েছে সেখানে প্রটেকশন ওয়াল নির্মাণের পাশাপাশি বস্তা ফেলে নদী ভাঙ্গনের কবল থেকে ভূক্তভোগীদের রক্ষার জন্য কাজ শুরু হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

আরও খবর

                   

সম্পর্কিত