অর্থ বাণিজ্য ডেস্ক ১৩ আগস্ট ২০২৪ , ১২:৩২:৩৩ প্রিন্ট সংস্করণ
সংকটে থাকা দেশের ব্যাংক খাতে নতুন অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। সরকার পতনের পর এই খাতে ব্যাংকের মালিকানা পরিবর্তনসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়েছে। এমনকি আন্দোলন-বিক্ষোভ গোলাগুলিতে গড়িয়েছে। এমন অস্থিরতায় উদ্বিগ্ন আমানতকারীরা।
শেষে কী হয় না হয়—এমন অনিশ্চয়তার মধ্যে থেকে অনেক সঞ্চয়কারী ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছেন। এর মধ্যে এটিএম বুথগুলোতে নগদ টাকার সংকট এবং ব্যাংক থেকে দুই লাখ টাকার বেশি না তোলার বাধ্যবাধকতা লেনদেনে গ্রাহক ও আমানতকারীদের আরো অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। আর্থিক খাত বিশেষজ্ঞরা যদিও বিদ্যমান সংকট দ্রুত কেটে যাবে বলে ভরসা দিচ্ছেন, কিন্তু পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি না হলে সংকট বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
সরকার পতনের পর থেকে মালিকানা বদল ও পদবঞ্চিতদের দাবি আদায়ে আন্দোলন শুরু হয়েছে ব্যাংকে ব্যাংকে।
ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গত রবিবার ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ের সামনে এই ঘটনায় অন্তত ছয়জন গুলিবিদ্ধ হন। সরকার পতনের পর থেকে ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তারা ব্যাংকটির পর্ষদ পুনর্গঠনের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে ‘লুটেরাদের’ বের করে দেওয়ার দাবি জানান।
গতকাল সোমবারও প্রধান কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন ব্যাংকটির পুরনো কর্মীরা।
ফলে ব্যাংকটিতে ২০১৭ সালের পর নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তারা কেউ প্রবেশ করতে পারেননি। পাশাপাশি তাঁরা রবিবারের গুলির ঘটনার বিচার দাবি জানিয়েছেন।সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে মহড়া দিয়েছে একদল অস্ত্রধারী। এতে আতঙ্কে রয়েছেন ব্যাংকের কর্মী ও গ্রাহকরা। আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ও তাঁর ছেলেসহ বেক্সিমকোর সব পরিচালকের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন ব্যাংকটির বর্তমান ও চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
ইউসিবির বর্তমান পর্ষদের বিরুদ্ধেও মানববন্ধন করে শেয়ারহোল্ডারদের একটি অংশ। বেসরকারি খাতের আইএফআইসি, ওয়ান, বাংলাদেশ কমার্সসহ কয়েকটি ব্যাংকে বিক্ষোভ হয়। সুযোগ-সুবিধা ও দাবি নিয়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকেও বিক্ষোভ হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ব্যাংকের মতো একটি স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠানে আন্দোলন-গোলাগুলি কোনোভাবেই কাম্য নয়।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ কালের কণ্ঠকে বলেন, ব্যাংকে বিক্ষোভ-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। গত কয়েক বছরে কোনো কোনো ব্যাংকের একটি পক্ষ ব্যাংকের অন্য সব শেয়ারহোল্ডারকে কোণঠাসা করে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে। এ কারণে অনেক অনিয়মও হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা যেখানে হয়েছে, সেসব জায়গায় বিক্ষোভ হবে—এটাই স্বাভাবিক। তবে বিক্ষোভ ব্যাংকের দরজায় না করে আলোচনার টেবিলে হওয়া উচিত। সেটা হতে হবে একটা নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে। কর্মীদের অভিযোগ জানানোর একটা সঠিক প্ল্যাটফরম দিতে হবে। যাঁরা বিক্ষোভ করছেন, ক্ষোভ প্রকাশ করছেন, তাঁদের ইস্যুগুলো হয়তো যৌক্তিক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে এই আলোচনাগুলো শুরু করে ব্যবস্থাপনা ও পর্ষদে পরিবর্তন আসা দরকার
মাশরুর রিয়াজ আরো বলেন, ঢালাওভাবে ব্যাংক থেকে টাকা ওঠানোর পরিমাণ দুই লাখ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না। এতে ট্রানজেকশনের ক্ষতি হবে। ধীরে ধীরে এটাও বাড়িয়ে একটু যৌক্তিক জায়গায় নিয়ে যেতে হবে।
গবেষণা সংস্থা পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর মনে করছেন, গত কয়েক দিনে বিভিন্ন ব্যাংকে মালিকানা নিয়ে বিক্ষোভ, আন্দোলন, নিয়ন্ত্রণ নেওয়াসহ যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, জরুরি ভিত্তিতে সেখানে হস্তক্ষেপ করতে হবে।