শেরপুর প্রতিনিধি ১০ আগস্ট ২০২৪ , ১১:০৮:২৩ প্রিন্ট সংস্করণ
শেরপুরের ঝিনাইগাতী বেদে পল্লীতে পূর্বশত্রুতার জেরে চাচার ঘরবাড়ি ভাংচুর ও লুটপাট করে নিয়ে গেছে ভাতিজারা। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন নারি পুরুষ সহ ৫ জন। শনিবার (১০আগষ্ট) দুপুরে উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নের ডেফলাই গ্রামের বেদে পল্লীতে এ ঘটনা ঘটে ।
জানা গেছে, বেদে পল্লীর জামাল মিয়া ও নুরু মিয়া সহোদর দুই ভায়ের মধ্যে পূর্ব থেকে বিরোধ চলে আসছিল। জামাল মিয়ার মেয়ে সেলিনার বিবাহ হয় জামাল মিয়ার সহোদর ভাই নুরু মিয়ার ছেলে জিতুর সাথে। বিবাহের পর সেলিনা ২ সন্তানের জন্ম দেন। এর কিছুদিন পূর্বে জিতু ও সেলিনার মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে। বেদে সম্প্রদায়ের নিজস্ব সংস্কৃতি অনুযায়ী স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদে হলে সন্তানরা থাকবে তার বাবার কাছে। কিন্তু সেলিনা তাদের সংস্কৃতি না মেনে তার ওরসজাত দুই ছেলেকে নিজের কাছে রাখতে সম্প্রতি আদালতের আশ্রয় নেয়। আদালত দুই সন্তানের দ্বায়িত্ব দেয় সেলিনাকে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে জিতুর পরিবারের লোকজন সেলিনার পরিবারের লোকজনের সাথে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, গত জুলাই মাসে জিতুর ছোট ভাই রাসেলের মেয়ে মিথিলা (১২)কে লুকিয়ে রেখে সেলিনার পরিবারের সদস্যের নামে থানায় গুম মামলা দেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।
পরে মিথিলাকে বের করে নিয়ে আসে জিতুর মিয়ার পরিবার। এ নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে গত ৬ আগষ্ট হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাদশা দুই পরিবারের মধ্যে মিমাংসা করিয়ে দেন। কিন্তু জিতুর পরিবারের লোকজন উপজেলা চেয়ারম্যানের বিচার মানতে নারাজ। এ নিয়ে জিতুর পরিবারের লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করে আসছিল। আজ শনিবার দুপুরে জিতুর নেতৃত্বে ১০ /১৫ জন সন্ত্রাসী দা-লোহার রড ও লাঠিসোটা নিয়ে সেলিনার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ৪ টি ঘরের আসবাবপত্র টিভি, ফ্রিজসহ ঘরের সমস্ত মালামাল, হাড়িপাতিল ভাংচুর করে। ঘরের বেড়া কুপিয়ে তছনছ করে। ৫ লাখ নদগ টাকা ও ১০ ভরি উজনের স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায়। এসময় সন্ত্রাসীদের বাঁধা দিতে গিয়ে সেলিনা, সাবিনা এবং পপিসহ ৫ নারি পুরুষ আহত হয়।
আহতদের ঝিনাইগাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
খবর পেয়ে নলকুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রুকুনুজ্জামান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রকিবুল ইসলাম রোকন, ইউপি সদস্য এমদাদুল, বিএনপির নেতা কর্মিরা ঘটনাস্থলে যান।
এ সময় তারা জিতুর পরিবারের লোকজনকে শান্ত থাকার অনুরোধ করেন।
এ বিষয়ে জিতুর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা উপজেলা চেয়ারম্যানের বিচার মানিনা। পূর্বের ঘটনার বিচার হয় নাই। তাই আমরা এসব করেছি। প্রয়োজনে আরো করবো।
আহত সেলিনার বাবা জামাল মিয়া বলেন, আইন শৃংখলা বাহিনী না থাকায় আমাদের পরিবারের লোকজন নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় আছি।
এ ব্যাপারে নলকুড়া ইউপি চেয়ারম্যান সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ঘটনাটি বড়ই দুঃখজনক। তবে উভয় পক্ষকে সংঘাতে না জড়িয়ে শান্ত থাকতে বলেছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম রাসেল জানান, বিষয়টি আমি শুনেছি। শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।