অপরাধ

ভোলার বোরহানউদ্দিনে স্কুল শিক্ষিকাকে নির্যাতনের অভিযোগ

  বোরহানউদ্দিন প্রতিনিধি: কাওসার আহমেদ ৬ জুলাই ২০২৪ , ৭:৫৫:৪৮ প্রিন্ট সংস্করণ

বোরহানউদ্দিনে স্কুল শিক্ষিকাকে নির্যাতনের অভিযোগ
বোরহানউদ্দিনে স্কুল শিক্ষিকাকে নির্যাতনের অভিযোগ

নিজের কু-কর্ম ঢাকতে স্ত্রীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার বোরহানগন্জ বাজারের ফার্মেসী ব্যাবসায়ীর বিরুদ্ধে।বিয়ের পর থেকেই স্ত্রীকে নানাভাবে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে যেতেন বলে অভিযোগ করেন তার স্ত্রী।

শুক্রবার (৫ জুলাই) বিকেলে অভিযোগকারী স্কুল শিক্ষিকা সাংবাদিকদের সামনে এসব বিষয় তুলে ধরেন।

অভিযুক্ত কনকন বিশ্বাস ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার পক্ষিয়া ইউনিয়নের বোরহানগন্জ বাজারের ফার্মেসী ব্যাবসায়ী। ভুক্তভোগী স্ত্রীর নাম সীমা রানী দাস। তিনি পেশায় একজন স্কুল শিক্ষিকা।
ওই দম্পতির ১২ বছর বয়সী ও সারে ৪ বছর বয়সী দুটি কন্যাসন্তান রয়েছে।

মৌখিক বক্তব্যে সীমা রানী দাস বলেন, ১৪ বছর আগে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় সীমা ও কনকন বিশ্বাসের। বিয়ের পর থেকেই তাদের সাংসারিক জীবনে অশান্তি ও কলহ লেগেই থাকত বলে জানান কনকনের স্ত্রী। বিয়ের সময় তাকে স্বর্ণালংকার দেওয়া হয় এবং বিভিন্ন সময়ে নানা আসবাবপত্র দেওয়া হয় কনকন কে। বিয়ের পরপরই সীমা রানীর বেতনের চেকবই দখলে নেন অভিযুক্ত কনকন সীমা রানীর নামে করা ডিপিএস ভেঙ্গে ওই টাকা দিয়ে পক্ষিয়া ইউনিয়নে জমি কেনা হলেও পরবর্তীতে ওই জমি বিক্রি করে পুরো টাকা নিয়ে জান কনকন বিশ্বাস কোনো টাকা তাকে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন তার স্ত্রী। এতকিছু দেওয়ার পরও সবসময় অতৃপ্ত ও অখুশি থাকত বলে জানান তার স্ত্রী। এ নিয়ে তাকে নানাভাবে মানসিক নির্যাতন করা হতো বলে অভিযোগ তার।

পরে ২০১১ সালে স্বামীর ফ্যামেলি প্লানিং এর ইন্সপেক্টর পদে চাকুরীর আবেদনে স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ার জন্য তার মামা মৃনাল কান্তি হালদারের কাছ থেকে ২ শতাংশ জমি সাফ কাবলায় নিয়ে দেন বিনামুল্যে, চাকুরী হলে জমি ফেরৎ দেয়ার শর্তে। জমি ফেরৎ চাইলেই তার ওপর শারীরিক নিযার্তন শুরু করেন কনকন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় বেতনের টাকা তুলে তাকে দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন তাকে। এরপর থেকেই সন্তানদের ভরন পোষন না দেয়ারও অভিযোগ তুলেন স্ত্রী। একটি স্কুলের শিক্ষিকার সাথেও তার অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে বলেও জানান তার স্ত্রী।

বিষয়টি নিয়ে তাকে নানাভাবে শারীরিক নির্যাতন করতেন বলে অভিযোগ করেন স্ত্রী। বিভিন্ন সময়ে স্যান্ডেল, বেল্ট, ঝাঁটা, খুন্তি দিয়ে তাকে বেধড়ক মারধরও করা হতো। মারতে মারতে তিনি বলতেন তোর চৌদ্দগুষ্টিকে সাইজ করে দিবো। বাঁচতে চাইলে তোর বেতনের টাকা নিয়ে আয়। অনেক সময় মারতে মারতে অসুস্থ হয়ে গেলে স্ত্রীকে তার মামার বাড়ি রেখে আসতেন কনকন।

এ ছাড়া অনেক সময় স্ত্রীকে মেরে ফেলার হুমকি দিতেন তিনি। এ সময় তিনি বলতেন, ‘তোকে আমি মেরে ফেলব। এমন কায়দায় মারবো সবাই জানবে তুই আত্মহত্যা করছিস। খুন করেছি জানলেও আমার কিচ্ছু হবে না। আমার হাত অনেক লম্বা। আমার অনেক পাওয়ারফুল লোক আছে। তোর মামাদের কী ক্ষমতা আছে।’ এ ছাড়া বঁটি দিয়ে তাকে হত্যা করতেও উদ্যত হয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেন স্ত্রী।

এদিকে সন্তান হওয়ার পর সন্তানের সামনেই স্ত্রীকে পাশবিক নির্যাতন চালাতেন ওই ফার্মেসী ব্যাবসায়ী। এ ছাড়া সন্তানের সঙ্গেও বাজে আচরণ ও মারধর করতেন বলে অভিযোগ স্ত্রীর। পরে গত ২ বছর ধরে স্ত্রী-সন্তানদের ভরন পোষন বন্ধ করে দিয়ে তাদের মামা বাড়ি পাঠিয়ে দেন কনকন। এরপর ভুক্তভোগীর মামারা বিষয়টি মধ্যস্থতা করতে চাইলে কনকন ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে স্ত্রীকে নেবেন না বলে তাদের জানিয়ে দেন তিনি।

ভুক্তভোগীর মামা মৃনাল কান্তি হালদার বলেন, শিক্ষিত ছেলে ভেবে আমার ভাগ্নিকে তার সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু একজন শিক্ষিত ছেলের আচরণ যে এতটা জঘন্য ও ঘৃণ্য হবে তা কল্পনাও করতে পারিনি। মামা হিসেবে ভাগ্নির সুখ চেয়েছিলাম। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই ভাগ্নির মলিন চেহারা আমাকে মর্মাহত করেছে। আমি আমার ভাগ্নির ওপর হওয়া মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের বিচার চাই।

ভুক্তভোগী সীমা রানী দাস বলেন, আমার উপর হওয়া শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের সুষ্ঠু বিচার চাই।

অভিযুক্ত কনকন বিশ্বাস বলেন, তিনি যে অভিযোগগুলো করেছেন তা সম্পূর্ণ সত্যি নয় তবে রাগের মাথায় তার গায়ে আমি হাত তুলেছি এটা সত্য। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানিয়েছি সে বলেছে বসে বিষয়টি সমাধান করে দিবে সমাধান হলে আমি তার সঙ্গে সংসার করতে ইচ্ছুক।

আরও খবর

                   

সম্পর্কিত