অপরাধ ডেস্ক ২৮ জুন ২০২৪ , ১২:১১:৫৭ প্রিন্ট সংস্করণ
যানযট নিরসন কমিটি এর নামে ময়মনসিংহ শহরের বিভিন্ন সড়কে ট্রাক, সিএনজি, পিকআপ, অটোরিক্সা থেকে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজির সময়ে ১০ (দশ) জন চাঁদাবাজকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১৪, সিপিএসসি, ময়মনসিংহ।
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, র্যাব এলিট ফোর্স হিসেবে আত্মপ্রকাশের সূচনালগ্ন থেকেই বিভিন্ন ধরণের অপরাধ নির্মূলের লক্ষ্যে অত্যন্ত আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে আসছে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূল ও মাদকবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি খুন, চাঁদাবাজি, চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই চক্রের সাথে জড়িত বিভিন্ন সংঘবদ্ধ ও সক্রিয় সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে র্যাবের জোরালো তৎপরতা অব্যাহত আছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ময়মনসিংহসহ সারাদেশে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির কারন হচ্ছে বিভিন্ন পণ্যবাহী পরিবহনে চাঁদাবাজি। এই পণ্যবাহী পরিবহনে চাঁদাবাজির বিষয়টি ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচারিত হওয়ায় দেশব্যাপী ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। উক্ত জনদূর্ভোগ দূর করার লক্ষ্যে র্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী ময়মনসিংহসহ সারাদেশে র্যাবের বিভিন্ন ইউনিটের গোয়েন্দা দল তাদের নিজ নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় পাইকারী বাজারসহ বিভিন্ন স্থানের চাঁদাবাজির তথ্য উদ্ঘাটনের জন্য কাজ শুরু করে। এরই প্রেক্ষিতে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের উৎপাদনকারীদের নিকট হতে পন্য সামগ্রী সংগ্রহ পূর্বক ট্রাক/পণ্যবাহী যানবাহনে পাইকারী ও খুচরা বাজারে পৌঁছানোর সময় পথিমধ্যে নামে বে-নামে ভূয়া রশিদ অথবা কখনো কৌশলে বিভিন্ন ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে বিপুল পরিমান অর্থ চাঁদাবাজি করা হয়।
এরই ধারাবাহিকতায়, অধিনায়ক র্যাব-১৪, ময়মনসিংহ মহোদয়ের নির্দেশক্রমে র্যাব-১৪, সিপিএসসি, ময়মনসিংহ এর কোম্পানি কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ জাহিদুল ইসলাম ও স্কোয়াড কমান্ডার সহকারী পুলিশ সুপার মুহাঃ জাহিদ হাসান এর নেতৃত্বে সকাল ১১.৪৫ ঘটিকা থেকে ১৪.৩০ ঘটিকা পর্যন্ত ময়মনসিংহ এর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সংঘবদ্ধ পণ্যবাহী গাড়িতে চাঁদাবাজ চক্রের সক্রিয় ১০ জন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।
কোতোয়ালি থানাধীন আকুয়া বাইপাস এলাকা থেকে ০৪জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন ১ । মোঃ জাহাঙ্গীর ইসলাম(৪০), পিতা-মৃত আব্দুল মান্নান, সাং-কিছমত(৩০ নং ওয়ার্ড), ২। ফরহাদ হোসেন(৩৫), পিতা-বজলুর হক, সাং-আকুয়া ওয়ারলেছ গেইট (ডিএম রোড), ৩। ইদ্রিস আলী(৩৭), পিতা-আব্বাস আলী, সাং-আকুয়া (কান্দাপাড়া), ৪। তোফাজ্জল হোসেন(৪১), পিতা-আব্দুল ফারুক, সাং-আকুয়া (বোর্ডঘর), থানা-কোতোয়ালি, জেলা-ময়মনসিংহদের নেতৃত্বে ময়মনসিংহের আকুয়া বাইপাস এলাকায় পণ্যবাহী গাড়িতে চাঁদা আদায় করে থাকে।
কোতোয়ালি থানাধীন চরপাড়া এলাকা থেকে ০৪জন গ্রেফতার করা হয়েছে । গ্রেফতারকৃত ১। মোঃ মিঠুন(২৫), পিতা-মৃত আলাল উদ্দিন, সাং-চরপাড়া(প্রাইমারী স্কুল রোড), থানা- কোতোয়ালি, ২। সবুজ(৩৮), পিতা-মৃত হযরত আলী, সাং-ডিটুযারী (কাশিগঞ্জ), থানা-তারাকান্দা, ৩। আবু সাঈদ (৩০), পিতা-মৃত হানু, ৪। মোঃ রুবেল (৩০), পিতা-শাহাবুদ্দিন, উভয় সাং-চরপাড়া (জনতা ব্যাংকের পিছনে),থানা-কোতোয়ালি, সকলের জেলা-ময়মনসিংহগণ ময়মনসিংহের চরপাড়া এলাকায় পণ্যবাহী গাড়িতে চাঁদা আদায় করে থাকে।
কোতোয়ালি থানাধীন শম্ভুগঞ্জ ব্রীজ এলাকা থেকে ০২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে । গ্রেফতারকৃত ১। মোঃ রফিকুল ইসলাম(৩৫), পিতা-মৃত লাল মিয়া, সাং-দত্তপাড়া, থানা-ঈশ্বরগঞ্জ, ২। মোহাম্মদ আলমাস(৪০), পিতা-মৃত আবু তাহের, সাং-নওয়াগাঁও, থানা-গৌরীপুর, উভয় জেলা-ময়মনসিংহদ্বয়ের নেতৃত্বে ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জ এলাকায় পণ্যবাহী গাড়িতে চাঁদা আদায় করে থাকে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা উক্ত চাঁদাবাজির সাথে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে। তারা ময়মনসিংহের বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কে পণ্যবাহী গাড়িতে চাঁদাবাজি করে। গ্রেফতারকৃতরা কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে প্রতিদিন ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার উপর অবস্থান নেয়। দেশের বিভিন্ন স্থান হতে পণ্যবাহী যানবাহন ময়মনসিংহে প্রবেশের সময় তারা লেজার লাইট, লাঠি ও বিভিন্ন সংকেতের মাধ্যমে গাড়ি থামিয়ে ড্রাইভারদের নিকট অবৈধভাবে চাঁদা আদায় করে থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা চাঁদা আদায়ের রশিদও প্রদান করে থাকে। ড্রাইভাররা তাদেরকে চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তাদের গাড়ি ভাংচুর, ড্রাইভার-হেলপারকে মারধর সহ প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে। তারা প্রতিটি ট্রাক ও পণ্যবাহী যানবাহন হতে চাঁদা আদায় করে থাকে। উক্ত চক্রটি ময়মনসিংহের বিভিন্ন স্থান হতে প্রতি রাতে পণ্যবাহী গাড়ির চালকদের নিকট হতে লক্ষাধিক টাকা চাঁদা আদায় করে থাকে মর্মে জানা যায়। গ্রেফতারকৃত আসামীদের নিকট হতে আরো জানা যায় যে, তাদের আশ্রয়দাতা,পৃষ্ঠপোষকতাকারী ও মদতদাতাদের তথ্য পাওয়া যায় এবং ভবিষ্যতে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনার জন্য র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারী ও অভিযান অব্যাহত থাকবে।
মাত্র তিন ঘন্টার অভিযান পরিচালনা করে সর্বমোট ১৪,৬৪০/- টাকা ,০৩টি কোটি, ০৩টি লাঠি ও বিপুল পরিমাণ চাঁদা আদয়ের রশিদ উদ্ধার সহ ১০ জন শীর্ষ চাঁদাবাজকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১৪, ময়মনসিংহ।
গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের পূর্বক ময়মনসিংহের কোতোয়ালি থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
তথ্যসূত্রঃ র্যাব-১৪, সিপিএসসি, ময়মনসিংহ