সারাদেশ

শেরপুরে বনরানী রিসোর্টে চলছে অসামাজিক কার্যকলাপ

  শেরপুর প্রতিনিধি ৩ আগস্ট ২০২৪ , ৮:৩০:১৯ প্রিন্ট সংস্করণ

শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার গারো পাহাড়ের বনরানী রিসোর্টে অবাধে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ উঠেছে ।এ অভিযোগ এলাকাবাসীর।
এতে যুবসমাজের নৈতিক অধপতনের পাশাপাশি এলাকায় অসামাজিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে ।

জানা গেছে গারো পাহাড়ের পাদদেশে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্ত ঘেষে অবস্থিত সৌন্দর্যের নীলাভুমি ঝিনাইগাতী উপজেলার গারো পাহাড়।

যে সৌন্দর্যকে কেন্দ্র করে ১৯৯৩ সালে উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের গজনী এলাকায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গড়ে তোলা হয় একটি পিকনিক স্পট।

মৌজার নামানুসারে নাম রাখা হয় গজনী অবকাশ বিনোদন কেন্দ্র।

শুরু থেকেই এ বিনোদন কেন্দ্রটিতে সারা দেশ থেকে আসা ভ্রমন বিলাশীদের পদভারে মুখরিত হয়ে পরে। এ কেন্দ্র থেকে প্রতিবছর সরকারের ঘরে আসে বিপুল পরিমাণে রাজস্ব।

জানা গেছে, এ অবকাশ বিনোদন কেন্দ্র ভ্রমন বিলাশীদের জন্য একটি রেষ্ট হাউস থাকলেও বিনোদন কেন্দ্রটি সীমান্ত এলাকায় হওয়ায় সে রেষ্ট হাউসে প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাতযাপনের কোন অনুমতি দেয়া হয়নি ।

এ ছাড়া ঝিনাইগাতী উপজেলায় আর কোন রেষ্ট হাউস ও নেই। ফলে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত ভ্রমন পিপাশুসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ ঝিনাইগাতীতে এসে বিপাকে পরতে হয়।

এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভিসাইন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা হবিগঞ্জের আমজাদ হোসেন ফনিক্স নামে একজন ব্যবসায়ী গজনী অবকাশ বিনোদন কেন্দ্রের পাশেই গড়ে তোলেন বনরানী রিসোর্ট নামে একটি রেষ্ট হাউস। জানা গেছে, গত প্রায় ৫ বছর ধরে চলে আসছে এ রিসোর্ট।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রিসোর্টে শুরু থেকেই অবাধে চলে আসছে এখানে দেহ ব্যবসা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত প্রেমিক- প্রেমিকাসহ অনেক প্রতিতারা খদ্দের এনে এরিসোর্টে সময় কাটাচ্ছেন।

জানা গেছে, এ রিসোর্টে এক দুই ঘন্টা সময় কাটাতে রিসোর্টের মালিককে দিতে হয় ২ থেকে ৫ হাজার টাকা। এভাবে দীর্ঘদিন থেকে এ রিসোর্টে অসামাজিক কার্যকলাপ চলে আসলেও স্থানীয় প্রশাসন নিরব ভুমিকা পালনের অভিযোগ রয়েছে। এ রিসোর্টে অসামাজিক কার্যকলাপের এবিষয়ে উপজেলা মাসিক আইন শৃংখলা কমিটির সভায় উপজেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক একেএম সামেদুল হক আলোচনাও করেছেন।

এখানে শুধু দেহ ব্যবসাই চলে তাই নয় রিসোর্টি ভারত সীমান্ত এলাকায় হওয়ায় ঢাকা থেকে চোরাকারবারি এসে এ রিপোর্টে থেকে নিরাপদে চোরাকারবারির ব্যবসাও চালিয়ে আসছে বলে জানান স্থানীয়রা।

সীমান্ত ও পাহাড়ি এলাকায় কোন রিসোর্ট গড়ে তোলতে হলে জেলা প্রশাসশের অনুমতির প্রয়োজন হয়। কিন্তু বনরানী রিসোর্টের জেলা প্রশাসনের অনুমতি দেয়া হয়েছে কি না জানতে চাওয়া হলে প্রশাসন এ বিষয়ে কিছুই বলতে পারেননি। তবে রিসোর্টের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে পর্যটন শিল্প ও মন্ত্রনালয় থেকে তাদের অনুমতি নেয়া হয়েছে।

রিসোর্টে দেহ ব্যবসার বিষয়ে ৩ আগষ্ট শনিবার দুপুরে স্থানীয় লোকজন সাংবাদিকদের জানালে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবহিত করা হয়।

থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে না এসে উক্ত রিসোর্টের ম্যানেজারের সাথে ফোনে কথা বলেন। এ সময় রিসোর্টের ম্যানেজার দ্রুত ওই কপোত-কপোতীতে রিসোর্ট থেকে বের করে দেন। পরে স্থানীয় লোকজন ওই কপোত-কপোতীকে রিসোর্ট থেকে দ্রুত চলে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন রিসোর্টের ম্যানেজার সমস্যার কথা বলে তাদের রিসোর্ট থেকে বের করে দিয়েছেন।
রিসোর্টের ম্যানেজার আব্বা আলীর সাথে রিসোর্টে অসামাজিক কার্যকলাপের বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন পর্যটন মন্ত্রনালয় থেকে তাদের রিসোর্টের বিষয়ে অনুমতি নেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, রিসোর্টে মানুষ আসে আনন্দ ফুর্তি করার জন্য। এখানে কোন মানুষ কি কোরআন পরতে আসবে।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বছির আহমেদ বাদল বলেন থানায় পুলিশ ফোর্স ছিল না। একারনে পাঠাতে পারিনি। তবে ম্যানেজারের সাথে কথা হলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন।

ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, রিসোর্টে অসামাজিক কার্যকলাপের বিষয়টি আমার কানে এসেছে। তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শেরপুরের জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল খায়রুমের সাথে কথা হলে তিনি বলেন রিসোর্ট পরিচালনা করতে হলে প্রশাসনের অনুমতির প্রয়োজন আছে। কিন্তু বনরানী রিসোর্টের অনুমতি নেয়া হয়েছে কি না আমার জানা নেই। তবে এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরও খবর

                   

সম্পর্কিত