অনলাইন ডেস্ক ২৭ জুলাই ২০২৪ , ১১:৫৪:৪৯ প্রিন্ট সংস্করণ
কোটা সংস্কারের আন্দোলনকে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রভাব পড়েছে দেশের শিক্ষা কার্যক্রমের ওপর। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীরা। তিন দফায় এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার আগামী ১ আগস্ট পর্যন্ত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এই অনির্ধারিত বন্ধের প্রভাব পড়েছে প্রাথমিক শিক্ষা থেকে উচ্চ শিক্ষা স্তরে। দেশের চার কোটি শিক্ষার্থী পড়েছে বিপাকে।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, শিক্ষার এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়ে এখন থেকেই কাজ শুরু করতে হবে। না হলে ক্ষতির প্রভাব পড়বে দীর্ঘ মেয়াদে। করোনাকালে টানা দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ক্ষতি এখনও পুষিয়ে উঠতে পারেনি শিক্ষা খাত। তারা বলছেন, অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম দ্রুত শুরু করার পক্ষে মতামত দেন তারা।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড জানিয়েছে, সব শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা আগামী ২৮, ২৯, ৩১ জুলাই ও ১ আগস্টের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এর আগে গত ১৮, ২১, ২৩ ও ২৫ জুলাইয়ের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছিল। স্থগিত হওয়া পরীক্ষার তারিখ পরে জানানো হবে। স্থগিত হওয়া পরীক্ষার পরিবর্তিত সময়সূচি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পরবর্তীতে জানিয়ে দেওয়া হবে।
গত ৩০ জুন থেকে সিলেট বোর্ড ছাড়া সারা দেশে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। তবে বন্যার কারণে সিলেট বোর্ডের পরীক্ষা ৯ জুলাই শুরু হয়। পূর্বঘোষিত পরীক্ষাসূচি অনুযায়ী, ১১ আগস্ট লিখিত পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন ১১ আগস্টের পর স্থগিত পরীক্ষাগুলো নেওয়া হবে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হলো, ৪ আগস্ট থেকে আবার পরীক্ষা যথারীতি নেওয়া হবে।
এখনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার মতো পরিবেশ তৈরি হয়নি বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা বিবেচনা করতে পারছি না। ঘোষণা দিয়ে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করা কারও কাম্য নয়। সে জন্য আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। এখন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা চলমান। তাই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রক্রিয়াটা পুনরায় শুরু করার চেষ্টা করছি। সেই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় মনে করছে, চলতি মাস বন্ধের মধ্য দিয়েই যেতে পারে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, তারা শিক্ষার্থীদের নিয়ে কোনো ঝুঁকি নিতে চান না। এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলে আবার কোনো সমস্যা হয় কি না, সেটিই তাদের ভাবনার বিষয়।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের পাশাপাশি সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় কর্মসূচি বাতিলের দাবিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টানা কর্মবিরতিতে চলতি মাসের শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অচলাবস্থা চলছিল। এর মধ্যে কোটা সংস্কার দাবির আন্দোলনকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংঘাত-সংঘর্ষ শুরু হয়। পরিস্থিতি এমন অবস্থায় পৌঁছায় যে, একের পর এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়। ১৬ জুলাই সব সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এই সিদ্ধান্তের আলোকে পরদিন ১৭ জুলাই শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। অনির্ধারিত বন্ধের কারণে ক্লাসের পাশাপাশি পরীক্ষার ওপরও প্রভাব পড়ে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েছে তাদের অধীন সব পরীক্ষা পরবর্তী তারিখ ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত থাকবে।
১৬ জুলাই রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠান) এবং পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোর শ্রেণি কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধের ঘোষণা দেয় মন্ত্রণালয়। এর ফলে বিদ্যালয়গুলোর চলমান মাধ্যমিক পর্যায়ের
ষাণ্মাসিক পরীক্ষাও বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে এই মূল্যায়ন কার্যক্রম চলছিল।
শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সবাই লেখাপড়ার বিরাট ক্ষতি নিয়ে চিন্তিত। তবে এই ক্ষতি পোষাবে কীভাবে এর পরিকল্পনা এখনও নেওয়া হয়নি। সরাসরি শিক্ষার ক্ষতির বাইরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সামাজিক ও মানসিক প্রভাবও রয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, শিক্ষার্থীদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
শহরকেন্দ্রিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষা কার্যক্রমে সব সময়ই এগিয়ে থাকে। সবার জন্য ন্যূনতম সুযোগগুলো নিশ্চিত না করার ফলে গ্রাম-শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ধনী-গরিবের বৈষম্য আরও বাড়ছে। পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট বাড়বে। শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়বে।
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থী অভিভাবকরা এক ধরনের উৎকণ্ঠায় আছেন। এর মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু রাখাটা চ্যালেঞ্জ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দ্রুত শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম সচল রাখার বিষয়ে তিনি পরামর্শ দেন।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কবে খুলবে এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, আমরা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছি। তবে এখনও বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, করোনার ধাক্কা সামাল দিয়ে শিক্ষাসূচি এখনও ঠিক হয়নি। প্রতি বছরের এপ্রিলে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। আমাদের টার্গেট ছিল আগামী বছরের এপ্রিলে পরীক্ষা নেওয়ার।