এফএনএস ১১ জুলাই ২০২৪ , ২:৪০:২৯ প্রিন্ট সংস্করণ
তীব্র গরমে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু চাহিদার সাথে সঙ্গতি রেখে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে না। ফলে সারা দেশেই এখন লোডশেডিং বাড়ছে। বিশেষ করে লোডশেডিংয়ে গ্রামীণ এলাকাগুলোয় ভোগান্তি চরমে উঠেছে। পরস্থিতি দিন দিন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। অনেক এলাকায় দিনে ও রাতে অন্তত ৮-১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। বিশেষ করে সন্ধ্যার দিকে বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকলেও গভীর রাতে অন্তত ৪-৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। ঈদ ঘিরে ইতোমধ্যে রাজধানীসহ দেশের বড় শহরগুলো থেকে ঈদযাত্রীরা আসতে শুরু করেছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে গ্রামাঞ্চলে জনভোগান্তি আরো তীব্র হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গ্রীষ্মের প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতের চাহিদাও বাড়ছে। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন করতে না পারায় সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় বিতরণ কোম্পানিগুলোকে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। দেশের সিংহভাগ বিদ্যুতের গ্রাহক বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বিআরইবি) আওতাধীন এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় সেখানেই গ্রাহক ভোগান্তি সবচেয়ে বেশি। মূলত গ্যাসের সংকট থাকায় চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া বিআরইবি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ হ্রাস ও লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ার পেছনে বড় ভূমিকা রাখছে দুর্বল বিতরণ ব্যবস্থা।
এ দুর্বল বিতরণ ব্যবস্থার কারণেই বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। সূত্র জানায়, গত মাসের শেষদিক থেকে সারা দেশে লোডশেডিংয়ের মাত্রা বাড়ছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা যশোর, ঝিনাইদহ, খুলনা ও সাতক্ষীরায় গত কয়েক দিনে লোডশেডিংয়ের তীব্রতা বেড়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের পর বিদ্যুতের লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর তা ঠিক হলেও লোডশেডিং ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। দিনের বেলায় বিদ্যুৎ কম আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকলেও রাতের বেলায় অন্তত ৫-৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। ফলে গরমের কারণে বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই ছড়াতে শুরু করেছে। বিদ্যুৎ না থাকায় দোকানপাট থেকে শুরু করে সব ধরনের প্রতিষ্ঠান এমনকি হাসপাতালেও এখন চরমে ভোগান্তি হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় রেমালের সময় দেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতায় প্রায় পৌনে তিন কোটি গ্রাহক বিদ্যুৎহীন ছিল, যা মোট গ্রাহকের প্রায় ৫৮ শতাংশ। ঘূর্ণিঝড়ের পর সংযোগ স্বাভাবিক হলেও গ্রীষ্মের প্রকোপ বাড়ায় লোডশেডিংও ব্যাপক হারে বাড়ছে। এতে গ্রামাঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উৎপাদন তীব্র সংকটে পড়েছে। সূত্র আরো জানায়, দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ২৭ হাজার মেগাওয়াট। বর্তমানে গড় চাহিদা সাড়ে ১৪ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু গ্যাসের অভাবে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর অর্ধেক সক্ষমতা বসিয়ে রাখতে হচ্ছে। অন্যদিকে জ্বালানি তেলের উচ্চ মূল্য ও ডলার সংকটের কারণে সেখান থেকেও পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। সময়মতো বিল পরিশোধ না করায় কমেছে আমদানীকৃত বিদ্যুতের পরিমাণও। তাছাড়া বিআরইবি চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কিছুটা কম পাঁচ্ছে। তবে গ্রাহক বেশি থাকায় বিদ্যুৎ বিতরণে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। ফলে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। লোডশেডিংয়ের আরেকটি বড় কারণ বিতরণ ব্যবস্থার দুর্বলতা। এদিকে এ বিষয়ে বিপিডিবির সদস্য (বিতরণ) রেজাউল করিম জানান, বিদ্যুতের চাহিদা ও উৎপাদনে কিছুটা ঘাটতি হচ্ছে এটা সত্য। তবে সেটি গ্যাসের কারণে। গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি বেড়ে এখন দুই হাজার মেগাওয়াটে দাঁড়িয়েছে। আগে যেখানে গ্যাস থেকে সাত হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যেত, সেখানে এখন পাঁচ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন হচ্ছে। এর বাইরে ময়মনসিংহসহ বেশকিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহে কিছুটা সমস্যা রয়েছে। তবে সেটি খুব বেশি নয়। সংকট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে।
এফএনএস