অনলাইন ডেস্ক ১০ জুলাই ২০২৪ , ১২:৪৯:৫৮ প্রিন্ট সংস্করণ
নবী মুহাম্মদ (সা.)কে নিবেদিত মিশরীয় পপ তারকা আমাল হিজাজির গানটি কোটি দর্শকের প্রশংসা কুড়ালেও সমালোচনাও করছেন অনেকে। সমালোচকদের দাবি, ‘গানটিতে বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা উচিত হয়নি। ইসলামে গান বাজনা হারাম করা হয়েছে।’
আমাল হিজাজির গানটি নবী সা. এর প্রশংসা নির্ভর গান হলেও সমালোচকদের দাবিটি অমূলক নয়। ইসলামি স্কলার ও মুফতিদের মতে, দেশাত্মবোধক, আল্লাহ ও রাসুল সা.কে নিয়ে রচিত গানেও বাদ্যযন্তের ব্যবহার বৈধ নয়।
ইসলামের চার মাযহাবই এ বিষয়টির ওপর একমত। কারণ, ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা আবু বকর রা. গানবাদ্যকে শয়তানের বাঁশি বলে আখ্যায়িত করেছেন। কুরআন ও একাধিক হাদিসেও গানবাদ্যকে হারাম করা হয়েছে।
কুরআনে আল্লাহ তায়ালা সূরা লুকমানে আখেরাত-প্রত্যাশী মুমিনদের প্রশংসা করার পর দুনিয়া-প্রত্যাশীদের ব্যাপারে বলছেন, আর একশ্রেণির লোক আছে, যারা অজ্ঞতাবশত খেল-তামাশার বস্তু ক্রয় করে বান্দাকে আল্লাহর পথ থেকে গাফেল করার জন্য। (সূরা লুকমান-৬)
উক্ত আয়াতের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, নযর ইবনে হারিস বিদেশ থেকে একটি গায়িকা বাঁদী ক্রয় করে এনে তাকে গান-বাজনায় নিয়োজিত করল। কেউ কুরআন শ্রবণের ইচ্ছা করলে তাকে গান শোনানোর জন্য সে গায়িকাকে আদেশ করত এবং বলত মুহাম্মদ তোমাদের কুরআন শুনিয়ে নামায, রোযা এবং ধর্মের জন্য প্রাণ বিসর্জন দেওয়ার কথা বলে। এতে শুধু কষ্টই কষ্ট। তার চেয়ে বরং গান শোন এবং জীবনকে উপভোগ কর। (মাআরিফুল কুরআন ৭/৪)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. কে উক্ত আয়াতের ‘লাহওয়াল হাদীস’ এর ব্যাখ্যা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘তা হল গান।’ আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা., আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. একই কথা বলেন। তাবেয়ী সায়ীদ ইবনে যুবাইর থেকেও অনুরূপ মত বর্ণিত হয়েছে। বিখ্যাত তাবেয়ী হাসান বসরী রাহ. বলেন, উক্ত আয়াত গান ও বাদ্যযন্ত্রের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে, যা বান্দাকে কুরআন থেকে গাফেল করে দেয়। (তাফসীরে ইবনে কাসীর ৩/৪৪১)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, পানি যেমন (ভ‚মিতে) তৃণলতা উৎপন্ন করে তেমনি গান মানুষের অন্তরে নিফাক সৃষ্টি করে। (ইগাছাতুল লাহফান ১/১৯৩; তাফসীরে কুরতুবী ১৪/৫২) আমার উম্মতের মধ্যে এমন কিছু লোক সৃষ্টি হবে, যারা ব্যভিচার, রেশম, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল সাব্যস্ত করবে। (বুখারী-৫৫৯০) মুসনাদে আহমদের হাদীসে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তাআলা আমাকে মুমিনদের জন্য হিদায়াত ও রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছেন এবং বাদ্যযন্ত্র, ক্রুশ ও জাহেলি প্রথা বিলোপসাধনের নির্দেশ দিয়েছেন। এ সকল হাদীসের ওপর আমল করতে যেয়েই ইসলামি স্কলাররা ইসলামিক গান ও নাতে রাসুল সা. ওপর রচিত গানে বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার হারাম করেছেন। পপ তারকা আমাল হিজাজীর গানটি বাদ্যযন্ত্রহীন গাওয়া হলে বিতর্কেই উর্দ্ধে উঠেই সর্ব মহলের প্রশংসা কুড়াতো।