নওগাঁ প্রতিনিধি: বিশ্বনাথ সরকার ২১ জুন ২০২৪ , ১০:৫১:২২ প্রিন্ট সংস্করণ
কুড়িগ্রামে গতকাল বৃহস্পতিবার দিনভর হালকা বৃষ্টির পর রাতে বৃষ্টি হয়নি। তবে এতে নদীপাড়ের পানিবন্দী লোকজনের ভোগান্তি কমেনি। রাতে বৃষ্টি না হওয়ায় জেলার প্রধান প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি কমে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ার কথা থাকলেও তিস্তা-ধরলাসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি বেড়েছে চলছে।
ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও গঙ্গাধর নদে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে তীব্র ভাঙনের কারণে নদীপাড়ের বাসিন্দাদের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, গত ২৪ ঘন্টায় ২১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তবে গতকাল(বৃহস্পতিবার) রাতে কোন বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়নি।শুক্রবার(২১ জুন) সকাল ৬টায় কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের(পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, কুড়িগ্রামে তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে আজ সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৫ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং ধরলা নদীর পানি তালুক শিমুলবাড়ী পয়েন্টে কিছুটা কমে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়াও ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গাধর ও দুধকুমার নদের পানি বেড়ে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।এদিকে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও গঙ্গাধর নদে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ধরলা নদীর ভাঙনে রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের কিং ছিনাই, জয়কুমার ও নামা জয়কুমার গ্রামের কমপক্ষে ১০টি পরিবার নদীভাঙনের শিকার হয়ে বাঁধের রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছে। ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে জয়কুমার আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ কিং ছিনাই গ্রামের প্রায় তিন শতাধিক পরিবার। একই উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের কালীরহাট ঘাট এলাকায় তিস্তার ভাঙণে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বাজার ভাঙণের ঝুঁকিতে পড়েছে। ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে রৌমারী ফেরী ঘাট ও উপজেলার বন্দবেড় ইউনিয়নের চরবন্দবেড়, ফলুয়ারচর, পালেরচর, কুটিরচর, দক্ষিণ ফলুয়ারচর, পশ্চিম ফুলুয়ারচর, খনজনমারা, দক্ষিণ বাগুয়ারচর ও চর শৌলমারী ইউনিয়নের খেদাইমারী, ঘুঘুমারী, সুখেরবাতি, সোনাপুর, চর খেদাইমারী, শেখের বাজারসহ প্রায় ৩০টি গ্রামের দুই শতাধিক পরিবার। গত এক সপ্তাহে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে রৌমারী উপজেলার চর শৈলমারী ও বন্দবেড় ইউনিয়নের ৫০টি বাড়ী ও প্রায় ৩০ একর ফসলি জমি ভেঙে গেছে। উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের খুদিরকুঠি এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনের ঝুঁকিতে খুদিরকুঠি উচ্চ বিদ্যালয় ও বাজার, চিলমারী উপজেলায় কাচকোল এলাকায় ভাঙনের ব্রহ্মপুত্রের ডানতীর রক্ষা বাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে।রৌমারী ফেরী ঘাট ইজারাদার মো. নাসির উদ্দিন খাঁন বলেন, উজানের ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে রৌমারী ফেরী ঘাট এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। জরুরীভাবে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা না করলে ফেরী ঘাটটি নদীতে বিলিন হয়ে যাবে।রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের কিং ছিনাই এলাকার বাসিন্দা রাশিদুল হাসান জানান, গতকাল থেকে ধরলা নদীর পানি বেড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এক দিনের ব্যবধানে ধরলা পাড়ের প্রায় ১৫টি বাড়ি ভেঙে গেছে। এছাড়াও নামা জয়কুমার, জয়কুমার ও কিং ছিনাই গ্রামের তিন শতাধিক পরিবার ও বন্যা আশ্রয়ন প্রকল্পের বিল্ডিংসহ প্রাথমিক বিদ্যালয় ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে রয়েছে। ভাঙন রোধে এখন পর্যন্ত কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, এই মুহুর্তে জেলায় ৫ থেকে ৬ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন তীব্র আকারে দেখা দিয়েছে। ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তায় ভাঙ্গর রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন কাজ করছে। শুক্রবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জেলার ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শনে এসেছেন। তিনি রৌমারী ও ব্রহ্মপুত্র নদের বিভিন্ন ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করবেন।জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ প্রথম আলোকে বলেন, কুড়িগ্রামে উজানের ঢলে নদ-নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যার্তদের উদ্ধারের জন্য চারটি স্প্রিড বোড প্রস্তুত করে রয়েছে। বন্যার্তদের জন্য নগদ ১২ লাখ ৩৬ হাজার টাকা, ২৫১ মেট্রিক টন চাল প্রস্তুত রয়েছে