ষ্টাফ রিপোর্টার: মো.আসিফুজ্জামান আসিফ ১৫ জুন ২০২৪ , ৮:৩১:৫৫ প্রিন্ট সংস্করণ
প্রতি বছর দুই ঈদকে কেন্দ্র করে লাখ লাখ মানুষ রাজধানী ঢাকা থেকে দেশের নানা প্রান্তে ছুটে যান। এবারের ঈদুল আজহায়ও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না।
গত দুই দিন ধরে ঢাকা ছাড়ার হিড়িক পড়েছে। আগামী দুই দিনও ঈদযাত্রা অব্যাহত থাকবে। সোমবার (১৭ জুন) দেশে উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। এর আগেই নাড়ির টানে গন্তব্যে পৌঁছাবেন লাখ লাখ নগরবাসী।
ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে নানা ব্যবস্থা। তবু একসঙ্গে এত মানুষের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে ভোগান্তি ও দুর্ভোগের মুখে পড়তেই হচ্ছে জনসাধারণকে। ট্রেন, বাস ও লঞ্চে করে লাখ লাখ মানুষ ছুটে যাচ্ছেন নানা গন্তব্যে কম-বেশি সবখানেই দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে তাদের। এছাড়া বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
ঈদে এবারও অনলাইনে আগাম টিকিট বিক্রি করেছে রেলওয়ে। বুধবার (১২ জুন) থেকে শুরু হয়েছে ট্রেনের ঈদযাত্রা। অপেক্ষাকৃত স্বস্তির এই বাহনেও দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে যাত্রী সাধারণকে। শিডিউল বিপর্যয় হয়েছে বেশ কিছু ট্রেনের। রেলমন্ত্রী ট্রেনযাত্রা নির্বিঘ্ন হওয়ার দাবি করলেও বিভিন্ন ট্রেন দেরিতে ছাড়া এবং গন্তব্যে পৌঁছার তথ্য পাওয়া গেছে।
ঈদে বাসে করে সবচেয়ে বেশি যাত্রী ঢাকা ছাড়ে। বরাবরের মতো এবারও বাসযাত্রায় কমবেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। শুক্রবার দিনভর উত্তরের পথে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক, পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটে পড়ে যাত্রীদের ভোগান্তির শিকার হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
যদিও সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, এবার সড়কপথে কোনো যানজট নেই। গাড়ি বেশি হওয়ায় ধীরগতি আছে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শুক্রবার (১৪ জুন) দাবি করেছেন, কোথাও যানজট নেই। ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হচ্ছে বলে দাবি তার।
পুলিশের মহাপরিচালক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন কিছুটা যানজটের কথা স্বীকার করে বলেছেন, সড়কে গাড়ির চাপ কয়েক গুণ বেশি হওয়ায় এই ধীরগতি। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনী সক্রিয় রয়েছে বলে জানান তিনি।
শুক্রবার সকাল থেকেই ঢাকা ছাড়তে যাত্রীদের ঢল নামে রাজধানীর বিভিন্ন বাস টার্মিনালে। এদিন গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে প্রচুর ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। রাতেও সেই ভিড় আছে। আগামীকাল ও পরশু ভিড় কমবে না বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে বাসের যাত্রীরা নির্বিঘ্নে ঢাকা থেকে বের হতে পারলেও রাস্তায় গিয়ে যানজটের মুখে পড়ছেন। বিশেষ করে পদ্মা সেতুর টোল আদায়ে ধীরগতির কারণে দীর্ঘ যানজটের মুখে পড়তে হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের। একই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে যাওয়া উত্তরের যাত্রীদেরও। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে পাটুরিয়া ফেরি ঘাটে। শুক্রবার ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটেও ছিল যানজটের ভোগান্তি। বিশেষ করে কাঁচপুর ব্রিজ থেকে নিয়ে কুমিল্লা পর্যন্ত গাড়ির চাপ বেশি লক্ষ্য করা গেছে।
এদিকে পদ্মা সেতু হওয়ার পর লঞ্চের যাত্রী কমে যাওয়ায় মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে যে হতাশা ছিল তাতে কিছুটা হলেও স্বস্তি মিলেছে এই ঈদে। শুক্রবার থেকে সদরঘাটে বেড়েছে ভিড়। দক্ষিণাঞ্চলের অনেক রুটের যাত্রীরা স্বস্তিদায়ক হিসেবে বেছে নিচ্ছেন লঞ্চযাত্রাকে।
এবারের ঈদ সাপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে মিলে যাওয়ায় লম্বা ছুটি পাচ্ছে নগরবাসী। কর্মজীবীরা বৃহস্পতিবার অফিস করে অনেকেই বাড়ির পথ ধরেছেন। শুক্র ও শনিবার দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটি। রোববার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত ঈদের ছুটি। সঙ্গে অনেকেই বুধ ও বৃহস্পতিবার ঐচ্ছিক ছুটি নিয়ে পরের সপ্তাহের আরও দুই দিনের ছুটি ভোগ করবেন। এতে টানা ৯ দিনের ছুটির ফাঁদে পড়তে যাচ্ছে দেশ। অনেকে ঈদের আগে না গেলেও ঈদের পর ঢাকা ছাড়বেন বলে জানা গেছে। নাড়ির টানে ছুটে চলা নগরবাসী স্বজনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে যথাসময়ে স্বস্তিতে ফিরতে পারবেন সেটাই সবাই প্রত্যাশা করছেন।