অপরাধ

টাকা ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্ব,ডাকাতদের হাতেই খুন হন আজাদ

  ষ্টাফ রিপোর্টার ১০ জুন ২০২৪ , ১০:৪২:৫০ প্রিন্ট সংস্করণ

টাকা ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্ব,ডাকাতদের হাতেই খুন হন আজাদ
টাকা ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্ব,ডাকাতদের হাতেই খুন হন আজাদ

২০১৮ সালে কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য ভাইয়ের বাসা থেকে বের হয়েছিলেন আজাহার ওরফে আজাদ। রাতে বাসায় না ফেরায় পরিবার তাকে অনেক খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন।

রাতভর খোঁজ নিয়েও তার সন্ধান মেলেনি। পরদিন রাজধানীর অদূরে আমিনবাজারের পাশে তুরাগ নদ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে এ ঘটনায় সাভার থানায় মামলা হলেও হত্যার কারণ থেকে যায় অজানা। অবশেষে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ঢাকা জেলা মামলাটির তদন্ত করতে গেলে ছয় বছর পর হত্যার রহস্য জট খুলে যায়। বেরিয়ে আসে হত্যার কারণ। শুধু তাই নয়, কারা কেন কীভাবে আজাদকে হত্যা করেছিল তাও উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

ডাকাত সর্দার মজিবর আকন ওরফে টেক্কা এবং তার সহযোগী সামিম হোসেনকে রোববার গাজীপুর ও মিরপুরের শাহআলী থেকে গ্রেফতার হলে তাদের থেকে হত্যার কারণ জানতে পারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
গ্রেফতারকৃতদের বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে সোমবার (১০ জুন) রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই এর সদর দফতরে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। সেখানে কথা বলেন পিবিআই ঢাকা জেলার ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মো. কুদরত-ই-খুদা।
তিনি জানান, ২০১৮ সালে ডাকাতির টাকা ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সর্দার মো. মজিবর আকন ওরফে টেক্কা (৪৯) ও তার অন্য দুই সহযোগী রুহুল আমিন লেদু (৪৩) এবং মো. সামিম হোসেনের (৩৩) হাতে নিহত হন ডাকাত আজাদ। তিনি নিজেও ডাকাত দলের সদস্য ছিলেন। চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে ও কাঁচি দিয়ে আঘাত করে আজাদকে হত্যা করে মরদেহ গুমের উদ্দেশ্যে সাভারের তুরাগ নদে ফেলে দেন তারা।
কুদরত-ই-খুদা আরও জানান, গ্রেফতারকৃতরা সংঘবদ্ধ আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। তারা রাজধানীর পার্শ্ববর্তী সাভার এবং আশুলিয়া থানা এলাকাধীন তুরাগ নদীতে দীর্ঘদিন ধরে ডাকাতি সংগঠন করে আসছিলেন। ২০১৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর আজাদসহ অন্যরা মিলে ডাকাতির উদ্দেশ্যে ট্রলারযোগে তুরাগ নদের গাবতলী ঘাট এলাকা থেকে আশুলিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হন। কিছুদূর যাওয়ার পর আজাদের সঙ্গে ডাকাত মজিবর আকন ওরফে টেক্কা এবং মজিবরের সেকেন্ড ইন কমান্ড আরেক আসামি রুহুল আমিন লেদুর আগের ডাকাতির টাকা পয়সা ভাগাভাগি নিয়ে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। এর একপর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এ সময় লেদু ধারালো অস্ত্র দিয়ে আজাদের পেছনে তিনটি কোপ দেন। এছাড়া মজিবরের কাছে রাখা চাপাতি দিয়ে আজাদকে কোপ দেন। তাদের আঘাতে আজাদ সেখানেই মারা যান। পরে তাকে তুরাগ নদে ফেলে দিয়ে তারা ডাকাতির জন্য চলে যায়।
পিবিআই ঢাকা জেলার ইউনিট ইনচার্জ বলেন, ডাকাত দলের সর্দার মজিবর আকনের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত নয়টি মামলা রয়েছে। তার সেকেন্ড ইন কমান্ড রুহুল আমিন ওরফে লেদুর বিরুদ্ধে তিনটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। লেদু একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন। গ্রেফতারকৃত সামিম হোসেনের বিরুদ্ধে একটি ডাকাতির মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। ডাকাত সর্দার মজিবরের আপন ভাই আনোয়ার হোসেন শামীমও ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। তার বিরুদ্ধেও এখন পর্যন্ত ৩টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। ডাকাত সর্দার টেক্কা এবং তার ভাই আনোয়ার হোসেন শামীম একেবারেই গরিব ঘরের সন্তান ছিলেন। তাদের আর্থিক অবস্থা ছিল খুবই শোচনীয়। কিন্তু বর্তমানে তারা ডাকাতি ও চাঁদাবাজির টাকায় গড়ে তুলছেন তাদের সাম্রাজ্য ডাকাতির টাকায় বাড়িতে গড়ে তুলেছেন বিশাল মাছের খামার। ডুপ্লেক্স বাড়ির নির্মাণ শুরু করেছেন।

কে এই ডাকাত সর্দার মজিবর?
পিবিআই জানায়, ডাকাত সর্দার মজিবর প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় ২০১৭ সালে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। ঢাকায় অপরাধ করে গাজীপুরে দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে গিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে আত্মগোপনে থাকতেন। তুরাগ নদীর সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুর অংশে বিভিন্ন মালবাহী ট্রলার, বালুবাহী বাল্কহেড ও অন্যান্য নৌযানে দীর্ঘদিন ধরেই ডাকাতি ও চাঁবাবাজি করে আসছিলেন। কেউ চাঁদা দিতে না চাইলেই রাতে দলবলসহ ওসব ট্রলারে ডাকাতি করতেন। ট্রলারের লোকজনকে মারধর করে তাদের কাছে থাকা টাকা পয়সা ও ট্রলারের মূল্যবান জিনিসপত্র ডাকাতি করে নিয়ে যেতেন।
এ সময় পিবিআই হেডকোয়ার্টার্সের পুলিশ সুপার (সিআরও অ্যান্ড মিডিয়া) মো. আবু ইউসুফ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) উপস্থিত ছিলেন।

আরও খবর

                   

সম্পর্কিত