প্রতিনিধি ৩১ মে ২০২৪ , ৩:০০:৫৭ প্রিন্ট সংস্করণ
র্যাব-৭, চট্টগ্রামের তত্ত্বাবধানে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সহ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় অঞ্চলের জলদস্যুদের মাননীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী মহোদয়ের নিকট আত্মসমর্পণ।
বাংলাদেশ আমার অহংকার এই স্লোগান নিয়ে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরনের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে জোরালো ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাব সৃষ্টিকাল থেকে সমাজের বিভিন্ন অপরাধ এর উৎস উদ্ঘাটন, অপরাধীদের গ্রেফতার সহ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। র্যাব-৭, চট্টগ্রাম অস্ত্রধারী সস্ত্রাসী, ডাকাত, ধর্ষক, দুর্র্ধর্ষ চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি, ছিনতাইকারী, অপহরণকারী ও প্রতারকদের গ্রেফতার এবং বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মাদক উদ্ধারের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করায় সাধারণ জনগনের মনে আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
বাংলাদেশের সীমানার একটি বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে বঙ্গোপসাগর। এই সাগরকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয় উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবন ও জীবিকা। বিশাল এই উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর উপার্জনের অন্যতম আশ্রয়স্থলকে কণ্টকাকীর্ণ করে রাখে কিছু অস্ত্রধারী বিপথগামী জলদস্যু। জলদস্যু দমনে সরকারের কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে র্যাব সক্রিয় ভূমিকা পালন করে চলেছে। র্যাবের কঠোর ভূমিকায় ইতিমধ্যে সুন্দরবন অঞ্চলের জলদস্যুরা বিগত সময়ে আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে। এর ফলে গত ০১ নভেম্বর, ২০১৮ খ্রি. তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অপার ঐশ্বর্যের অপূর্ব লীলাভূমি সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার অঞ্চলে র্যাবের কঠোর পদক্ষেপের ফলে ২০১৮ এবং ২০২০ সালে র্যাব-৭ এর তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের উপকূলীয় অঞ্চল হতে সর্বমোট ৭৭ জন জলদস্যু আত্মসমর্পণ করে। এর ফলে অত্র অঞ্চলের জলভাগে দস্যুতার ঘটনা কমে গেছে। আজকের এই আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের উপকূলীয় অঞ্চল জলদস্যুমুক্ত হবার পথে অনেক দূর এগিয়ে যাবে বলে আশা করা যায়। ফলশ্রুতিতে এই অঞ্চলের সাগরকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম আগামীর দিনগুলোতে আরো বেগবান হবে।
চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী এবং কক্সবাজার জেলার চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়ার হাজার হাজার উপকূলবর্তী মানুষ দীর্ঘদিন ধরে কতিপয় চিহ্নিত জলদস্যু ও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গ্রুপের কাছে জিম্মি হয়ে রয়েছে। এসকল মানুষের মধ্যে অনেকে জলদস্যুদের দ্বারা অত্যাচারিত হয়ে দুঃসহ জীবনযাপন করছেন। আর এসব এলাকার স্থানীয় অস্ত্র কারিগররা প্রতিনিয়ত এই জলদস্যু ও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের দেশীয় অবৈধ অস্ত্রের বড় একটি অংশ সরবরাহ করে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের বিস্তীর্ণ উপকূলীয় এলাকায় জলদস্যুদের দমন, দেশীয় অস্ত্র তৈরির কারিগর ও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে র্যাব প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করে আসছে। র্যাব-৭, চট্টগ্রাম প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে অদ্যবধি বাঁশখালী, চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া অঞ্চল সহ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের ৩৪২ জন কুখ্যাত জলদস্যু এবং অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীকে আটক করে এবং দেশী-বিদেশী মিলিয়ে সর্বমোট ২,৬০৩টি বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র সহ ২৯,১২৩ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করে। এছাড়াও গত ২০১৮ এবং ২০২০ সালে ৭৭ জন জলদস্যু র্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসে সরকারি ও বেসরকারি প্রণোদনায় পুনর্বাসিত হয়। যার ফলে বাঁশখালী, চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া অঞ্চলে বিভিন্ন জলদস্যু বাহিনীর অপতৎপরতা বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে।
এসব জলদস্যুপ্রবণ এলাকায় র্যাবের অবিরাম টহল এবং কঠোর মনোভাব প্রদর্শনের ফলে জলদস্যু এবং অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বাহিনীগুলো কার্যত কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। এছাড়াও র্যাব-৭, চট্টগ্রাম ক্রমাগত অভিযান, সক্রিয় গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক তৈরি এবং কৌশলগত পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে জলদস্যুদের কর্মকান্ড পরিচালনা করা দূরহ হয়ে পড়েছে। এসব কারনে জলদস্যুরা স্ব-প্রণোদিত হয়ে তাদের কাছে থাকা সমস্ত অস্ত্র ও গোলাবারুদ সহ আত্মসমর্পণ করার ইচ্ছা পোষণ করে।
ইতিপূর্বে র্যাব-৭, র্যাব-৬ এবং র্যাব-৮ এর তত্ত্বাবধানে বাঁশখালী, মহেশখালী, কুতুবদিয়া এবং সুন্দরবন উপকূলীয় অঞ্চল হতে জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়া অবলোকন করার ফলেও এসব জলদস্যুরা আত্মসমর্পণে অনুপ্রাণিত বোধ করে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদয় সম্মতিতে এবং মাননীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী মহোদয়ের নির্দেশনায় র্যাবের পক্ষ থেকে জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ করানোর বিষয়টি এক যুগান্তকারী ঘটনা।
৬। গত ২০১৮ এবং ২০২০ সালে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের উপকূলীয় অঞ্চলের ৭৭ জন জলদস্যুর সফল আত্মসমর্পন অন্যান্য জলদস্যুদের মাঝে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং তাদের মনে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সম্ভাবনার আশার আলো জেগে ওঠে। যার ফলে বাঁশখালী, চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া অঞ্চলের জলদস্যুরা তাদের দস্যু জীবনের অবসান ঘটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আশার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম তাদের জন্য আজকের এই আত্মসমর্পণের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় আজ ৩০ মে ২০২৪ খ্রি. তারিখে শর্তহীনভাবে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় অঞ্চলের ১২ টি বাহিনীর মোট ৫০ জন জলদস্যু আত্মসমর্পণ করছে। এদের মধ্যে ৪৯ জন পুরুষ এবং ১ জন মহিলা জলদস্যু রয়েছে। এই ৫০ জন জলদস্যুর মধ্যে তিনজন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত জলদস্যু। আত্মসমর্পণকারী জলদস্যুদের তালিকা ও জমাকৃত অস্ত্র, গুলি ও অন্যান্য সরঞ্জামাদির বিবরণ ক্রোড়পত্র ‘ক’ তে এবং জলদস্যু বাহিনী অনুযায়ী জলদস্যুদের নামীয় তালিকা ক্রোড়পত্র ‘খ’ হিসেবে দেওয়া হলো।
আত্মসমর্পণকারী জলদস্যুরা চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার জেলার বাঁশখালী, চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া অঞ্চলের সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম সু-সংগঠিত, ভয়ংকর, দুর্র্ধর্ষ ও সক্রিয় জলদস্যু বাহিনীর নেতা ও সদস্য। এসব বাহিনীর সকল অস্ত্র-গোলাবারুদ সহ সদলবলে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম এর তত্ত্বাবধানে মাননীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী মহোদয়ের নিকট আত্মসমর্পণ এর ফলে বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী বাঁশখালী, চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপকূলীয় অঞ্চলে দস্যুতায় নিয়োজিত অন্যান্য জলদস্যু ও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরাও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে দারুণভাবে উৎসাহিত হবে বলে আশা করা যায়। বাঁশখালী, চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া সহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের জলদস্যু অথবা অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করার লক্ষ্যে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম এর ধারাবাহিক অভিযান সামনের দিনগুলোতেও অব্যাহত থাকবে।
উপরোক্ত আত্মসমর্পণ সংক্রান্তে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।